মেহেরপুরে বিএসএফের পুশইন: নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩০ জন বাংলাদেশি সীমান্তে ফিরে

মেহেরপুরে বিএসএফের পুশইন: নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩০ জন বাংলাদেশি সীমান্তে ফিরে

 

জেলা প্রতিনিধি

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ভোরে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৩০ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে। এই ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির হাবিলদার মোহাম্মদ আলি জানান, পুশইনকৃতরা তেঁতুলবাড়িয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমানারেখার ১৪০/৬ এস পিলারের আনুমানিক ১০০ গজ ভেতরে মথুরাপুর মাঠপাড়া এলাকায় ফিরিয়ে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জীবিকার তাগিদে তারা ভোমরা সীমান্ত হয়ে ভারতের হুগলী ও সাতরাগাছিসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন। পরে ভারত সরকার কর্তৃক উচ্ছেদের সময় চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর বিএসএফ-এর ১৪৩/হাকিমপুর চেকপোস্ট থেকে তাদের আটক করা হয়েছিল। পুশইনকৃতদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ১০ জন নারী ও ৪ শিশু রয়েছে।

পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: খুলনা জেলার কয়রা থানার আবু দাউদ সানা (৫৩), তার স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৪৮) ও ছেলে সুমন আজাদ (২৫), তেরখাদা থানার শহিদুল গাজী (৭৪) ও নাসির গাজী (২০), যশোরের কেশবপুর থানার শাহাদাত আলী (৬২), তার মেয়ে মোসাম্মৎ সুফিয়া বিবি (৪৬) ও ছেলে আসি কালে (১৭), সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার রেশমা পারভীন (৩৫), মরিয়ম খাতুন (১৩), জান্নাতি খাতুন (৬), পাটকেলঘাটা থানার তহিদুর বিশ্বাস (৩৬), সদর থানার রাহান মোড়ল (২৮), বাগেরহাট জেলার বিল্লাল হোসেন (৪০), মিজান আকন (৪০), রহিমা বেগম (২৬), হাসান, ছায়রা বেগম (৩৫), কোবির আকনের ছেলে হাসিব (১৪), খুলনা সদর থানার শরিফুল সানা (২২), কয়রা থানার মইনুর রহমান (১৮), শাকিল আহমেদ (২৩), শিউলি বেগম (৩০), আফরিন সুলতানা (১২), মারিয়া সুলতানা (১), অভইনগর থানার আবির (২৫), কোটা পাইড়া থানার সকিনা বিবি (৩৬), কয়রা থানার শামীম গাজী (১৫) ও সালাউদ্দিন গাজী (৮), এবং ময়মনসিংহ জেলার রুজিনা আফরিন (২৪)।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল জানান, আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

পুশইন কার্যক্রম সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই ধরনের ঘটনা সাধারণত সীমান্ত অঞ্চলের জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। সীমান্ত প্রশাসন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চালায় এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে তাদের নিরাপদে পরিবারের কাছে হস্তান্তর নিশ্চিত করে।

স্থানীয় প্রশাসকরা বলছেন, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা মূলত অভ্যন্তরীণ সীমান্ত এলাকার অসংগঠিত শ্রমিক, যারা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পার হয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের ফেরত পাঠানো একদিকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে তাদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। প্রশাসন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের পুশইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সারাদেশ