মাগুরায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানি

মাগুরায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানি

 

জেলা প্রতিনিধি

মাগুরার সদর উপজেলায় দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবকের মৃত্যু এবং আরেকজনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের মালিকগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে দ্রুতগতির যান চলাচলের কারণে অতীতে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটার তথ্য স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে।

নিহত আব্দুর রহিমের বয়স ৩০ বছর। তিনি মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়ি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাহবুবুর রহমানের ছেলে। আহত ২৫ বছর বয়সী রিয়াজ মাগুরা সদর উপজেলার মালিকগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ী থেকে মাগুরা শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার ভাড়াবাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন। একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে মালিকগ্রাম এলাকায় আরেকটি মোটরসাইকেল এসে পড়লে দুইটির মধ্যে সরাসরি মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দুই মোটরসাইকেলের সামনের অংশ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রিয়াজকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের মালিকগ্রাম অংশটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। সড়কের কিছু স্থান সংকীর্ণ এবং বাঁকযুক্ত হওয়ায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। নিয়মিত নজরদারির অভাব, গতিরোধক না থাকা এবং সড়কের কিছু অংশে দৃশ্যমানতা কম হওয়াকে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এলাকাবাসী। তারা আরও জানান, এলাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি জানান, নিহতের মরদেহ প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ, গতি সীমা অতিক্রম করা হয়েছিল কি না বা অন্য কোনো ত্রুটি ছিল কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

দুর্ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা সড়কে নিরাপদ গতিসীমা নির্ধারণ, ট্রাফিক নজরদারি বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কীকরণ চিহ্ন স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামাল দিতে সড়ক সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

জেলাজুড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধিকে বিশেষজ্ঞরা সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং চালকদের অসতর্কতার যৌথ ফল বলে মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে চালকেরা হেলমেট ব্যবহার করেন না, অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন না এবং বিপরীত লেনে প্রবেশসহ বিভিন্ন নিয়ম ভঙ্গ করেন। এসব কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং সড়কের মানোন্নয়ন এই ধরনের দুর্ঘটনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নিহত আব্দুর রহিমের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি কাজের প্রয়োজনে নিয়মিত মাগুরা শহরে যাতায়াত করতেন এবং দুর্ঘটনার সময়ও তিনি বাড়ি থেকে শহরের ভাড়াবাড়িতে ফিরছিলেন। পরিবারের সদস্যরা দুর্ঘটনার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামবাসী ও স্বজনরা হাসপাতাল ও বাড়িতে জড়ো হয়ে নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার এ ধরনের পুনরাবৃত্তি রোধে তারা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এ দুর্ঘটনা আবারও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সড়ক নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

সারাদেশ