ঢাকায় রিখটার স্কেলে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই

ঢাকায় রিখটার স্কেলে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানী ঢাকায় রিখটার স্কেলে ৪.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই কম্পন শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে।

ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল টঙ্গী থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং নরসিংদী থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল প্রায় ৩০ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশ অঞ্চলে সংঘটিত মাঝারি ধরনের কম্পনের মধ্যে পড়ে। ভূমিকম্পের মাত্রা ৪.১ হওয়ায় এটি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করেনি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভোরবেলার নীরবতার মধ্যে হঠাৎ স্থানীয় বাসিন্দারা হালকা কম্পন অনুভব করেন। অনেকে ঘরের দরজা-জানালা কেঁপে ওঠার শব্দ শুনে বিষয়টি উপলব্ধি করেন। বেশিরভাগ এলাকায় কম্পনের স্থায়িত্ব ছিল কয়েক সেকেন্ড, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেনি। তবে ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী কিছু এলাকায় কম্পন তুলনামূলক বেশি অনুভূত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

রাজধানীর উচ্চ-অবকাঠামো ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবসময়ই বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় থাকে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা একটি সক্রিয় ফল্ট লাইনের নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থান করায় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও শহরের দুর্বল ভবনগুলোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যদিও বৃহস্পতিবারের কম্পন তেমন কোনো মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি, তবুও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ভবনগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত নিরাপত্তা মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন বিভাগ জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভূকম্পন প্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি মাত্রার কম্পন ঘন ঘন অনুভূত হচ্ছে। এসব কম্পনের বেশিরভাগই স্বল্প গভীরতার এবং স্বল্প স্থায়িত্বের হলেও ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহের জন্য সতর্কতা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এর আগের ঘটনা হিসেবে চলতি সপ্তাহেই ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে কক্সবাজার শহরসহ উখিয়া, চকরিয়া ও আশপাশের এলাকায় স্বল্প সময়ের একটি কম্পন অনুভূত হয়। ওই ঘটনায়ও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় কম্পন অনুভূত হওয়ায় ভূতাত্ত্বিকরা অঞ্চলটির টেকটোনিক সক্রিয়তার ওপর নজর রাখছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভারতীয় ও বার্মা টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় অবস্থান করায় এই অঞ্চলে ছোট-বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দীর্ঘমেয়াদে থেকেই যায়। ফলে যেকোনো ধরনের কম্পনের পর ভবনের গঠনগত স্থায়িত্ব, নির্মাণকাজের মান এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনা নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। রাজধানীতে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা, ঘনবসতি এবং উচ্চ ভবন নির্মাণের হার বিবেচনায় নিয়ে ভূমিকম্প-সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তকরণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন গবেষকরা।

এ ধরনের মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প ভবিষ্যতে বড় কোনো কম্পনের ইঙ্গিত বহন করে কি না—সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতভেদ থাকলেও অধিকাংশই মনে করেন যে ছোট ধরনের কম্পন ভূ-পৃষ্ঠে সঞ্চিত চাপ নিরসনে সহায়ক হতে পারে। তবে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায় না। তাই জরুরি প্রস্তুতি, উদ্ধার সক্ষমতা এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে তারা উল্লেখ করেন।

এদিকে, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সীমিত আকারে যোগাযোগ রক্ষা করছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য না পাওয়া গেলেও যে কোনো ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। ভবন মালিকদের নিজ নিজ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিয়মিত পরিদর্শনের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আলোকে বিশেষজ্ঞরা আবারো মনে করিয়ে দিয়েছেন, শহুরে পরিকল্পনা, অবকাঠামো নির্মাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ জোরদার করা হলে ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের ছোট কম্পনকেও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ