ভারতের বড় সংগ্রহও টিকল না; সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা

ভারতের বড় সংগ্রহও টিকল না; সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা

খেলাধুলা ডেস্ক

রায়পুরে ভারতের দেওয়া ৩৫৮ রানের লক্ষ্য চার বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। সেঞ্চুরি করা এইডেন মার্করাম, ম্যাথু ব্রিৎজকে এবং ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয়। তিন ম্যাচ সিরিজে এ জয়ে ১-১ সমতা ফেরাল তারা।

গতকাল টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৫৮ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে সেঞ্চুরি আসে দুই ব্যাটারের ব্যাটে—বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোহলি তার ৮৪তম শতরান পূর্ণ করেন, আর রুতুরাজ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তবে বড় সংগ্রহ গড়লেও ভারতের বোলাররা প্রয়োজনীয় ব্রেকথ্রু আদায় করতে ব্যর্থ হন, যার সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৪৯.২ ওভারে।

ইনিংসের শুরুতে ভারতকে চাপে ফেলতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ফিরে যান ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মা। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে স্থিতি ফেরান বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দু’জন মিলে গড়ে তোলেন ১৯৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ।

রুতুরাজ গড়েন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ৮৩ বলে ১০৫ রানের ইনিংস খেলে তিনি আউট হলেও ভারতের রানের গতি তখনও ছিল সচল। অন্যদিকে কোহলি তুলে নেন ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৫৩তম সেঞ্চুরি, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মোট সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড় করায় ৮৪-তে। আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির তালিকায় তিনি শীর্ষে থাকা শচীন টেন্ডুলকারের পেছনে অবস্থান করছেন।

সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোহলি। ১০২ রানে এনগিডির বলে মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভারতের রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। এরপর অধিনায়ক লোকেশ রাহুল পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আগ্রাসী ইনিংস খেলেন। তিনি মাত্র ৩৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তবে শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর রান আউট হন মাত্র ১ রানে এবং রবীন্দ্র জাদেজা ২৭ বলে ২৪ রান করে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে ভারত শেষ পর্যন্ত ৩৫৮ রানে থেমে যায়।

রায়পুরের পিচ ও শিশিরের প্রভাব আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে লক্ষ্য রক্ষা ভারতীয় বোলারদের জন্য সহজ হবে না। ম্যাচের শুরুতেই সেই বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২৬ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ৪৬ রান করে আউট হলেও অপরপ্রান্তে মার্করাম ধারাবাহিকভাবে রান তুলতে থাকেন।

মাত্র ৯৮ বলে ১১০ রানের সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসকে স্থিতিশীল করেন মার্করাম। তার আউটের পরও ভারত ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। মিডল অর্ডারে ম্যাথু ব্রিৎজকে ৬৮ রানের পরিপাটি ইনিংস খেলে দলকে এগিয়ে নেন। তাকে কার্যকর সহায়তা করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। মাত্র ৩৪ বলে ৫৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে তিনি ভারতের বোলারদের উপর চাপে রাখেন।

ব্রিৎজকে ও ব্রেভিস মিলে শেষ দিকের প্রয়োজনীয় রান তুলে নিলে ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণেই থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত ৪৯.২ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।

ভারতের জন্য ম্যাচটির অন্যতম শিক্ষণীয় দিক ছিল মাঝ ও শেষ ওভারে বোলিংয়ে ধার কমে যাওয়া। বিশেষ করে স্পিনার ও মিডিয়াম পেসাররা প্রয়োজনীয় উইকেট এনে দিতে ব্যর্থ হন। বড় সংগ্রহ গড়েও জয় না পাওয়ায় সিরিজ এখন তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে গড়াল, যা দুই দলের জন্যই সিরিজ নির্ধারণী লড়াই হিসেবে গুরুত্ব বহন করবে।

ভারত ব্যাটিংয়ে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখালেও বোলিং বিভাগকে পুনর্বিন্যাস করে পরবর্তী ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। অন্যদিকে মনোবল চাঙা থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে একই ছন্দ ধরে রাখতে চাইবে।

খেলাধূলা শীর্ষ সংবাদ