খেলাধুলা ডেস্ক
জার্মান কাপ ডিএফবি পোকালের শেষ ষোলোতে গোলসমৃদ্ধ এক লড়াইয়ে ইউনিয়ন বার্লিনকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে বায়ার্ন মিউনিখ। মিউনিখে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বায়ার্নের হয়ে একমাত্র স্বাভাবিক গোলটি করেন হ্যারি কেইন, আর বাকি দুটি গোল আসে প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী ভুলে। পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সামান্য ব্যবধান নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাভারিয়ানরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই বায়ার্ন মিউনিখ বল দখল ও আক্রমণের ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। মাত্র ১২ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল। জোশুয়া কিমিখের কর্নার থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুলবশত নিজেদের জালেই পাঠান ইউনিয়ন বার্লিনের ফরোয়ার্ড ইলিয়াস আনসাহ। আত্মঘাতী এই গোলেই এগিয়ে যায় বায়ার্ন।
এরপরও বিরতি দেয়নি স্বাগতিকরা। খেলা গড়াতে থাকলে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বায়ার্ন। ৩৫তম মিনিটে কিমিখের আরেকটি নিখুঁত কর্নার থেকে গ্লান্সিং হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন। চলতি মৌসুমে পোকাল প্রতিযোগিতার প্রতিটি রাউন্ডেই গোল করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এ তারকা ফরোয়ার্ড। নতুন দলে যোগ দেওয়ার পর তার গোলের ধারাবাহিকতা বায়ার্নের আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ পায় ইউনিয়ন বার্লিন। বায়ার্ন ডিফেন্ডার জোনাথন টাহর হাতে বল লাগলে ভিএআর পর্যালোচনার মাধ্যমে পেনাল্টি প্রদান করা হয়। স্পটকিক থেকে ব্যবধান কমান লিওপোল্ড কুয়ারফেল্ড। স্কোরলাইন যখন ২-১, তখন জমে ওঠে প্রতিযোগিতা; তবে বিরতির ঠিক আগে আবারও ভুল করে বসে ইউনিয়নের রক্ষণভাগ। মাইকেল অলিসের ক্রসে ডিয়োগো লেইটে বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেদের জালেই পাঠান। আত্মঘাতী এই দ্বিতীয় গোলের সুবাদে প্রথমার্ধে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বায়ার্ন।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই আবারও বিপদে পড়ে বায়ার্ন। ৫০তম মিনিটে বক্সের ভেতরে ফাউল করে বসেন হ্যারি কেইন, যার ফলে দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টি পায় ইউনিয়ন বার্লিন। কুয়ারফেল্ড আবারও সাফল্যের সঙ্গে শট নিয়ে ব্যবধান কমান ৩-২। দ্বিতীয়ার্ধে গোল হজমের পর বায়ার্নের রক্ষণদুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং পুরো ম্যাচজুড়েই প্রতিপক্ষ আক্রমণে চাপ বজায় রাখে।
ম্যাচের শেষদিকে ইউনিয়ন বার্লিন আরও অন্তত দুটি ভালো সুযোগ পায়। লুইস দিয়াসের একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে কুয়ারফেল্ড হ্যাটট্রিকের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। কাছ থেকে নেওয়া তার হেড বাইরে চলে গেলে সমতায় ফেরার সুযোগ হাতছাড়া হয় অতিথিদের।
ম্যাচ শেষে বায়ার্নের জয় হলেও তাদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা আবারও সামনে আসে। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বায়ার্নের গোল হজমের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যা বড় ম্যাচগুলোকে জটিল করে তুলতে পারে। ডিএফবি পোকালের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেও রক্ষণকে গোছানোর প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষত এ প্রতিযোগিতায় পরবর্তী ধাপে তারা আরও শক্তিশালী দলগুলোর মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে ক্ষুদ্র ভুলও বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
অন্যদিকে ইউনিয়ন বার্লিনের জন্য ম্যাচটি হতাশাজনক হলেও দলটি লড়াইয়ের মানসিকতা ধরে রেখেছে, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তারা বায়ার্নকে চাপে ফেলতে সক্ষম হয়। কুয়ারফেল্ডের জোড়া গোল ও আক্রমণাত্মক ফুটবল দলটির সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
পরিশেষে হ্যারি কেইনের গোল ও প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী ভুলে ম্যাচটি জিতলেও আসন্ন ধাপগুলোর জন্য বায়ার্নকে নিজেদের খেলার মান আরও উন্নত করতে হবে। আক্রমণভাগে ধারাবাহিকতা থাকলেও রক্ষণভাগের দুর্বলতা দূর করা এখন দলের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।


