জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি উপস্থিত চিকিৎসক দলের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সাম্প্রতিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত মূল্যায়ন করেন।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, লন্ডনের এ চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এবার তিনি সরাসরি ঢাকায় এসে চিকিৎসা অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, সাম্প্রতিক জটিলতা এবং পূর্ববর্তী রোগসমূহ বিবেচনায় রিচার্ড বিল চিকিৎসা পরিকল্পনায় সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি রোগীর শ্বাসযন্ত্রসংক্রান্ত সাম্প্রতিক সমস্যার কারণ, ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা এবং চলমান চিকিৎসার কার্যকারিতা পর্যালোচনা করেছেন।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সরাসরি উপস্থিতি চিকিৎসা কার্যক্রমে নতুন করে মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করেছে। তার আগমনের পর চিকিৎসা দল একাধিক সভা করে চিকিৎসার বিভিন্ন ধাপ পর্যালোচনা করেছে। বিকেলের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কিছু সংশোধনমূলক নির্দেশনা যুক্ত হতে পারে বলে চিকিৎসক দল ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হালনাগাদ তথ্য জানাতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের সামনের স্থানে ব্রিফ করবেন। তিনি সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফল, চিকিৎসায় পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি–সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতারা মনে করছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করবে।
এদিকে, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা সকাল থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তাদের অনেকেই দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে দলের প্রধান নেত্রীর দ্রুত সুস্থতার কামনা করেন। উপস্থিত কর্মীদের কেউ কেউ জানান, দলের প্রধান নেত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসপাতালে এসে দাঁড়িয়েছেন। সংগঠনের বিভিন্ন শাখা থেকেও নেতাকর্মীদের আগমন অব্যাহত ছিল।
কুমিল্লা থেকে আসা এক কর্মী জানান, নেত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি সকালে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করে আসছেন এবং হাসপাতালে এসে তার ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন জানাতে চান। হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং রোগী ও স্বজনদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া এ বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা অব্যাহত রাখেন। প্রায় চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় তার ফুসফুসে সংক্রমণ শনাক্ত হয়, যার ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত রোববার ভোরে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসক দল জানিয়েছে, তার পূর্ববর্তী জটিল অসুস্থতা এবং সাম্প্রতিক সংক্রমণের কারণে নিবিড় পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক জটিলতাগুলো দীর্ঘমেয়াদি এবং চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সম্মিলিত মতামত প্রয়োজন। রিচার্ড বিলের আগমন চিকিৎসা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত পরামর্শ নিশ্চিত করেছে, যা ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। চিকিৎসক দল তার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।


