খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দী

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দী

রাজনীতি ডেস্ক

খুলনা–১ (দাকোপ–বটিয়াঘাটা) আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে প্রথমবারের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দুই দশক আগে দলটির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কৃষ্ণ নন্দী বর্তমানে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত বুধবার বিকেলে স্থানীয় নেতাদের বৈঠকে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।

কৃষ্ণ নন্দী ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে হিন্দু কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ আসনে আগের মনোনয়নপাপ্ত মাওলানা আবু ইউসুফের পরিবর্তে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে। সোমবার খুলনায় অনুষ্ঠিত আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

দলীয় সূত্র অনুযায়ী, কৃষ্ণ নন্দী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে কাজ করে আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক–ধর্মীয় উদ্যোগে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি ছাড়াও স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় সিদ্ধান্তে তার মনোনয়নকে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে সামনে আনা হয়েছে।

মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলের ভেতরে কোনো অসন্তোষ নেই বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণ নন্দী জানান, বুধবারের বৈঠকে জামায়াতের আমির তাকে এবং আগের মনোনয়নপ্রাপ্ত মাওলানা আবু ইউসুফকে আহ্বান করে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রার্থী পরিবর্তন হলেও উভয় নেতাই নির্বাচনী প্রচারণায় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর কৃষ্ণ নন্দী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন এবং বিভিন্ন সময় চাপের মুখেও সংগঠনকে ছাড়েননি। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলীয় সূত্র মতে, স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় কর্মীকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী সাধারণত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিত্তি গড়ে তোলায় মনোযোগী থাকলেও এবার ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী মনোনয়ন নতুন রাজনৈতিক বার্তা বহন করতে পারে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ও স্থানীয় সামাজিক সংযোগ তার প্রার্থীতায় ভূমিকা রাখবে—এমন প্রত্যাশাও দলের অভ্যন্তরে রয়েছে। দাকোপ–বটিয়াঘাটা অঞ্চলে নদীভাঙন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং ঘূর্ণিঝড়–দুর্যোগসহ বিভিন্ন সংকট স্থানীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব ইস্যুতে প্রার্থীদের অবস্থান ও ভূমিকা স্থানীয় ভোটারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।

খুলনা-১ আসনটি ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। এ অঞ্চলের ভোটারগোষ্ঠীতে কৃষি, মৎস্য, লবণচাষ এবং শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। জলবায়ুর প্রভাব, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি এবং জীবিকাসংশ্লিষ্ট সংকট এ আসনের রাজনীতিতে নিয়মিত আলোচ্য বিষয়। ফলে এসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে এখনো পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা না হলেও স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনটি প্রচারণা প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রার্থী পরিবর্তনের ফলে দলটির ঘরোয়া সংগঠনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের প্রার্থী ও কৌশল নির্ধারণে সক্রিয় রয়েছে, যা নির্বাচনী প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করতে পারে।

খুলনা–১ আসনে নতুন প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর মনোনয়ন দলীয় কাঠামো ও স্থানীয় রাজনৈতিক সমীকরণে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে—তা নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর স্পষ্ট হতে পারে। দলীয় নেতাদের প্রত্যাশা, ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে সামনে আনার মাধ্যমে সংগঠনটি এলাকায় আরও বিস্তৃত পরিসরে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

রাজনীতি