টেকনাফ উপকূলে যাত্রীবাহী বোটের ইঞ্জিন বিকল, কোস্ট গার্ডের দ্রুত অভিযানে ৪৫ যাত্রী উদ্ধার

টেকনাফ উপকূলে যাত্রীবাহী বোটের ইঞ্জিন বিকল, কোস্ট গার্ডের দ্রুত অভিযানে ৪৫ যাত্রী উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে সমুদ্রে ভাসতে থাকা একটি যাত্রীবাহী বোট থেকে ৪৫ জন যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে শাহপরী দ্বীপসংলগ্ন গোলারচর এলাকার কাছে এ ঘটনা ঘটে। কোস্ট গার্ডের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোটসহ সব যাত্রীকে উদ্ধার করে স্থলে নিয়ে আসে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোস্ট গার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল ১১টায় ‘এমভি মায়ের দোয়া’ নামের একটি বোট টেকনাফের কায়ুকখাল ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়। যাত্রার প্রায় এক ঘণ্টা পর বোটটি শাহপরী উপকূলের নিকটবর্তী গোলারচর এলাকায় পৌঁছালে আকস্মিকভাবে শ্যাফট ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে বোটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সমুদ্রে ভাসতে থাকে এবং যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

বোটে থাকা যাত্রীরা জানান, বোটটি মধ্য সাগরে হঠাৎ শব্দ করে থেমে যায়। এ সময় ঢেউয়ের আঘাতে বোটটি দুলতে থাকায় নৌযানটিতে থাকা নারী ও শিশুদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়। বোটচালক ও সহকারী নৌকায় রাখা সামগ্রী দিয়ে বিকল ইঞ্জিন সচল করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে নিকটবর্তী উপকূলীয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট শাহপরীর একটি টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উদ্ধারকারী দল প্রথমে যাত্রীদের শান্ত করে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করে এবং পরবর্তী ধাপে বোটটি নিরাপদ নৌপথে টেনে নিয়ে আসে। সব যাত্রীকে সফলভাবে তীরে পৌঁছানোর পর তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। পরে প্রত্যেককে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

টেকনাফ সেন্ট মার্টিন নৌপথে নিয়মিতভাবে প্রচুর পর্যটক যাতায়াত করেন। শীত মৌসুমে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের চাপ বাড়ার কারণে এ নৌপথে যাত্রীবাহী বোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, পর্যটন মৌসুমে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়ে থাকে।

স্থানীয় নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, বোটের শ্যাফট ভাঙা সাধারণত অতিরিক্ত যান্ত্রিক চাপ, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি বা দীর্ঘদিন ব্যবহৃত খুচরা অংশ পরিবর্তন না করার কারণে ঘটে থাকে। সময়মতো সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হলে যাত্রীবাহী বোটগুলো যেকোনো সময় বিপদের মুখে পড়তে পারে। তারা মনে করেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বোটগুলোর যান্ত্রিক পরিদর্শন ও নিরাপত্তা মান পর্যবেক্ষণের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এ ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে কোস্ট গার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তারা উপকূলজুড়ে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি দেখা দিলে দ্রুত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবে। কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো নৌযান দুর্ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য তাদের সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে এবং নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সমন্বিত পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে।

টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন নৌপথে এর আগে বিভিন্ন সময় খারাপ আবহাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নৌদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর নৌ চলাচলের নিয়ম কঠোরভাবে মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে অনেক বোট মালিক ও চালক তা যথাযথভাবে অনুসরণ করেন না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পরিবহন নিয়ম কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও এটি নৌযানগুলোর যান্ত্রিক নিরাপত্তা এবং নিয়মিত পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে। উপকূলীয় এলাকায় পর্যটন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও উপকূলে দুর্ঘটনায় পড়া নৌযান ও যাত্রীদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এবং নৌপথের নিরাপত্তা রক্ষায় সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

সারাদেশ