খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি, আজ রাত বা ভোরে যাত্রার সম্ভাবনা

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি, আজ রাত বা ভোরে যাত্রার সম্ভাবনা

জাতীয় ডেস্ক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু অনুকূল থাকলে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল শুক্রবার ভোরে তাঁকে বিমানযোগে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে এবং তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে বিদেশে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার মধ্যে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তার শারীরিক জটিলতার উন্নত ব্যবস্থাপনা দেশে সম্ভব নয়। তাই তাকে বিদেশে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিমানে যাত্রার সময় যাতে কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা মোকাবিলা করা যায়, সে অনুযায়ী জরুরি চিকিৎসা প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

বেলা তিনটার পরে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফ করে বলেন, কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ রাতের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুক্রবার ভোরের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডন যাত্রা করবে। দেশের বাইরে যে হাসপাতালে তাঁকে নেওয়া হবে, তা পূর্বেই নির্ধারণ করা হয়েছে।

চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর তিন দফা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং চীনের চিকিৎসকেরা সরাসরি এসে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁদের দেখে নেওয়া সর্বশেষ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন এবং মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের বাইরে কোনো পদক্ষেপ বিবেচনা করা হচ্ছে না।”

গত ১২ দিন ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা পরিচালনা করছে। দেশের বাইরে থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও এই বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।

দলের একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, তাতে কিছুটা উন্নতি হলেও হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতা রয়ে গেছে। পাশাপাশি আরও কিছু শারীরিক সমস্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব কারণেই দ্রুত আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা প্রয়োজন বলে বোর্ডের সদস্যরা মত দিয়েছেন।

গতকাল রাতে চীনের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় পৌঁছে রাতেই মেডিকেল বোর্ডের আলোচনায় অংশ নেন। তার আগে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বেলে দুপুরে ঢাকায় এসে সরাসরি হাসপাতালে যান এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন। বোর্ডের সদস্যরা একত্রে সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে, উন্নত পর্যায়ের সমন্বিত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়া অত্যাবশ্যক।

খালেদা জিয়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। তখন তিনি কয়েক মাস সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসা নেন এবং পরে দেশে ফেরেন। অতীতে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের অভিজ্ঞতার কারণে দল এবং পরিবার উভয়েই চিকিৎসকদের পরামর্শের প্রতি আস্থা রাখছেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ফুসফুসে সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি ও অবনতির মধ্যে ওঠানামার প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বোর্ড বিদেশে নেওয়ার সুপারিশ করে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁর চিকিৎসা ও স্থানান্তরকে ঘিরে আলোচনা চলছে। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দেশের বাইরে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ থাকায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আজ রাত বা আগামীকাল ভোরে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ