জাতীয় ডেস্ক
দেশের বনসম্পদ, বন্যপ্রাণী ও সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় দুটি নতুন আইনগত কাঠামো অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দেশের বনভূমি সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনগত কাঠামোকে যুগোপযোগী করতে নতুন দুই অধ্যাদেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান বাস্তবতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়নের চাপ এবং অবৈধ দখলসহ বাড়তে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সংশোধনগুলো এতে যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর মাধ্যমে ১৯২৭ সালে প্রণীত বন আইন প্রতিস্থাপিত হবে। প্রায় এক শতাব্দী পুরোনো আইনটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। নতুন অধ্যাদেশে প্রাকৃতিক বন রক্ষা, বনভূমির সীমানা নির্ধারণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা এবং অবৈধ দখল প্রতিরোধে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর তদারকির ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার, আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণ এবং কোন বৃক্ষ কর্তনযোগ্য বা কর্তন নিষিদ্ধ হবে তার হালনাগাদ তালিকা তৈরির বিধান রাখা হয়েছে। এতে বন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য প্রতিফলিত হয়েছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিদ্যমান ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিবর্তনের কারণে তা হালনাগাদ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। নতুন ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ সেই লক্ষ্যেই প্রণীত হয়েছে। এ অধ্যাদেশে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ, শিকার, হত্যা, পাচার ও বেআইনি বাণিজ্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় করা হয়েছে। পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, উদ্ধারকাজ, শুশ্রুষা, বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাঠামোগত সহায়তা যোগ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে ‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের বিধান, যা সংরক্ষণ কার্যক্রমকে আর্থিকভাবে সহায়তা করবে। এই তহবিলের মাধ্যমে উদ্ধার ও পুনর্বাসনকেন্দ্র উন্নয়ন, গবেষণা প্রকল্প, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং সংরক্ষণ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হবে। নতুন কাঠামো মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করাকে ভবিষ্যৎ নীতিমালার অন্যতম লক্ষ্যে পরিণত করেছে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে সরকার পরিবেশগত নিরাপত্তা জোরদারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে আসছে। নতুন দুই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশে বনভূমি ব্যবস্থাপনা, বন্যপ্রাণী সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি আরও শক্তিশালী ও আধুনিক আইনগত ভিত্তি তৈরি হলো। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতি রক্ষার প্রচেষ্টায় এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


