বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি অব্যাহত, প্রাইভেট প্রেসে ব্যালট ছাপানো না করার আহ্বান

বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি অব্যাহত, প্রাইভেট প্রেসে ব্যালট ছাপানো না করার আহ্বান

জাতীয় ডেস্ক

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় থাকছে এবং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বিএনপি নতুন কয়েকজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে এবং কোনো অনিবার্য পরিস্থিতি ব্যতীত দল নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরে যেতে চায় না।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, তফসিল ঘোষণার সময় নিয়ে দলের কোনো আপত্তি নেই। বরাবরই দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপি ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তার মতে, জনগণই ঠিক করবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কার ওপর ন্যস্ত হবে, এবং নির্বাচন বিলম্বের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, দলের অবস্থান একই রয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে তারা অটল।

বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থান প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। নজরুল ইসলাম খান জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে পরিবারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুক্রবার ভোরে তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া হতে পারে, যা তার সুস্থতায় সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই বলে বিএনপি নেতার মন্তব্য। তিনি জানান, এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ নেই, কারণ প্রয়োজনীয় সময়সীমা এখনো অতিক্রম হয়নি এবং নাগরিক হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্তির সব সুযোগ বিদ্যমান।

বৈঠকে ব্যালট পেপার মুদ্রণ প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। নজরুল ইসলাম খান বলেন, সাধারণত সরকারি প্রিন্টিং প্রেসেই ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে থাকে। সম্প্রতি দলটি জানতে পারে যে সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে অন্য কোথাও ব্যালট মুদ্রণের চিন্তাভাবনা থাকতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে তারা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং অনুরোধ জানায় যাতে কোনো প্রাইভেট প্রেসে ব্যালট ছাপানো না হয়। সিইসি তাদের জানান, ব্যালট পেপার কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠানেই মুদ্রিত হবে এবং অন্য কোনো স্থানে ছাপানোর পরিকল্পনা নেই।

তিনি উল্লেখ করেন, আগেও ২০০৮ সালের একটি নির্বাচনে সীমিত পরিসরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ব্যালট ছাপানোর প্রচেষ্টা হয়েছিল, তবে পুরো প্রক্রিয়াই শেষ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হয়। সেই অভিজ্ঞতার কারণে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ব্যালট মুদ্রণ নিয়ে দলের উদ্বেগ রয়েছে।

এছাড়া দুই ধরনের ব্যালট ব্যবহারের কারণে ভোটকেন্দ্রে সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে। এবারের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ব্যালটের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালটও থাকবে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি ব্যালটে ভোট দিতে সময় বেশি লাগে; দুটি ব্যালট হলে সেই সময় আরও বাড়বে। এর পরও কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিটি বুথে ভোটারের সংখ্যা বেশি রাখা হলে ভোটের সময় সংকট দেখা দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে ভোটারদের অধিকার সুরক্ষায় কিছু বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দলটি নির্বাচনী কমিশনের কাছে তুলে ধরে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোটের সময়সীমা বাড়ানো, বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যালট বাক্সের সংখ্যা বাড়ানো এবং ভোটের মার্কিং পয়েন্ট বৃদ্ধি। বিএনপি মনে করে, এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

বৈঠকের সার্বিক আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল—যেন প্রতিটি ভোটার কোনো বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারেন এবং নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। বিএনপি নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা উদ্বেগ থাকলেও দলটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।

রাজনীতি