বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে নাম আসায় আইজিপিকে অপসারণে আইনি নোটিশ

বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে নাম আসায় আইজিপিকে অপসারণে আইনি নোটিশ

আইন আদালত ডেস্ক

বিডিআর হত্যাযজ্ঞসংক্রান্ত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ থাকার প্রেক্ষাপটে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। নোটিশদাতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন।

আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী—মো. আব্দুস সামাদ, মো. শাহিন হোসেন ও মো. আতিকুর রহমান—এই আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। আইনজীবীরা নোটিশে উল্লেখ করেছেন যে, তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে নাম আসার পরও আইজিপিকে দায়িত্বে বহাল রাখা ন্যায়বিচার, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং জনআস্থার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিগত কয়েক বছরে আলোচিত বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে যেসব ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জনমনে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল। কমিশন তার প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর করার পর প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ মহলেও আলোচনা চলছিল। আইজিপির নাম প্রতিবেদনে উল্লেখিত হওয়ায় বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানা যায়।

নোটিশদাতারা দাবি করেন, দেশের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উঠলে তার দায়িত্বে বহাল থাকা প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও তদন্ত-সংক্রান্ত ন্যায়বিচারের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। নোটিশে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অপসারণ করা, যাতে তদন্ত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং সামগ্রিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়।

আইনি নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে প্রকাশিত একটি সরকারি নথি। এই নথির আলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, প্রশাসনিক কাঠামোর শীর্ষস্তরে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হলে সরকারের উচিত তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তারা জানান, এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র প্রশাসনিক শুদ্ধি নিশ্চিত করাই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনআস্থা বাড়ানোর জন্যও অপরিহার্য।

নোটিশদাতারা আরও বলেন, তদন্ত কমিশনের সুপারিশ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে এবং এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে তা বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তারা মনে করেন, দায়িত্বে বহাল থাকা অবস্থায় উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত-সম্পর্কিত অভিযোগ বা সংশ্লিষ্ট বিবেচনায় নৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হলে সাধারণ নাগরিকদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি বলে তারা নোটিশে উল্লেখ করেন।

এই নোটিশ পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইজিপিকে অপসারণের বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কিনা বা সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ২৪ ঘণ্টার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা এখনো জানা যায়নি। নোটিশের প্রেক্ষিতে সরকারের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, বিডিআর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু ঘটে এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। সেই ঘটনার তদন্ত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা থাকায়, কমিশনের প্রতিবেদনে নাম আসা কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে বহাল থাকলে তা স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন তৈরি করে।

সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীর পাঠানো এই নোটিশ দেশটির প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিয়ে চলমান আলোচনাকে আরও তীব্র করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং নোটিশের আইনগত প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা এখন নজরকাড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইন আদালত