আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। দুই মাস আগে শুরু হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অক্ষুণ্ন রেখে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হলে গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক দায়িত্ব হামাসের পরিবর্তে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ন্যস্ত হবে। এই সরকার মূলত ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের পরিচয় এবং ওই সরকারকে সহায়তা করতে যে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে—সে বাহিনীর সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি বহুজাতিক বাহিনীকে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এ বাহিনী গাজায় স্থিতিশীলতা রক্ষা, মানবিক সহায়তা বিতরণ, এবং যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, এমন একটি বাহিনী গঠিত হলে গাজার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নভাবে এগোতে পারবে।
তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার আগে একাধিক বিষয় চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে হামাস কীভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর করবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তাদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আনা হবে—এমন প্রশ্নগুলো এখনো সমাধানের অপেক্ষায়। মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামাসের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আলোচনা প্রক্রিয়া অগ্রসর হলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
হামাস ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়তে প্রস্তুত। তবে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিকল্প কোনো বোর্ড বা আন্তর্জাতিক কাঠামোর অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা রাজি নয়। আলোচনা চলাকালে যে প্রশাসনিক কাঠামোর প্রস্তাব উঠে এসেছে, তাতে কয়েকজন আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ব্যক্তির সম্পৃক্ততার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করায় হামাস আরও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে দুই মাস আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সুযোগে হামাস নীরবে গাজার বহু অঞ্চলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আগের মতোই ধরে রেখেছে। বিভিন্ন স্থানীয় সূত্র ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সংগঠনটি মানবিক সহায়তা সমন্বয়, স্থানীয় নিরাপত্তা এবং দৈনন্দিন নাগরিক সেবাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রশ্নে হামাস স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে বলেছে, তারা কোনো রক্ষণাত্মক অস্ত্র হস্তান্তর করবে না। সংগঠনটির দাবি, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকায় আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র রাখার অধিকার তাদের রয়েছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক সমাধান প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি এবং দখলদারিত্বের অবসান ছাড়া নিরাপত্তা কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে গাজা উপত্যকায় একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে হামাসের অবস্থান, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর ভূমিকা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া—এই তিনটি উপাদানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে আসন্ন সিদ্ধান্ত অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা, ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
চলমান আলোচনার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে বছরের শেষ দিকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে না বলে ইঙ্গিত মিলেছে কূটনৈতিক মহল থেকে।


