খেলাধুলা ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নভেম্বর মাসের সেরা খেলোয়াড় বাছাইয়ে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অফস্পিনার সিমন হারমার এবং পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজ। টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই তিনজন নভেম্বরের সেরা খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
নভেম্বর মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তাইজুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বোলিং শক্তি। সিরিজে মোট ১৩ উইকেট নিয়ে তিনি দলের সিরিজজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্রথম টেস্টে সিলেটে পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে দুই ইনিংসেই চারটি করে উইকেট অর্জন করেন, যার ফলে পুরো সিরিজে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ উইকেটশিকারি হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ধারাবাহিক বোলিং সাফল্যের কারণে সিরিজ সেরার পুরস্কারও পান তাইজুল। তার এই পারফরম্যান্স তাকে আইসিসির মাসসেরা পুরস্কারের অন্যতম শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।
আইসিসির মাসসেরা পুরস্কার ২০২১ সাল থেকে প্রদান শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে এর আগে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাইজুল ইসলাম পুরস্কারটি জিতলে তিনি হবেন চতুর্থ বাংলাদেশি ক্রিকেটার। স্পিন বিভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে লড়াই এবারও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অক্টোবর মাসেও তিন স্পিনার ছিলেন মনোনয়নের তালিকায়, যা ধারাবাহিকভাবে স্পিনারদের আধিপত্যের ইঙ্গিত দেয়।
তাইজুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত সিমন হারমার ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক সিরিজজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ বছর পর এশিয়ার মাটিতে কোনো সিরিজে প্রোটিয়াদের জয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখেন এই অফস্পিনার। মাত্র ৮.৯৪ গড়ে দুই টেস্টে ১৭ উইকেট নেন তিনি। কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ৮ উইকেট এবং দ্বিতীয় টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। ধারাবাহিক উইকেটশিকারি হিসেবে তিনি সিরিজে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তার এই পারফরম্যান্স তাকে তালিকার শক্ত প্রতিযোগী করে তুলেছে।
পাকিস্তানের বাঁহাতি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজও গত মাসে ব্যাট-বলে সমানভাবে উজ্জ্বল ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে তিনি ৫২ গড়ে ১০৪ রান করেন এবং চার উইকেট নেন। টি–টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি ১২.৭২ গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেন এবং ৫২ রান করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মাত্র ১৭ রান খরচায় ৩ উইকেট নেওয়ায় তাকে ম্যাচসেরা নির্বাচিত করা হয়। সিরিজ জয়ে তার অলরাউন্ড নৈপুণ্য পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তাইজুল ইসলামের মনোনয়ন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটে। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তাইজুলের নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ ও ধারাবাহিক উইকেটশিকারি দক্ষতা তাকে জাতীয় দলে দীর্ঘদিন ধরে অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্পিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাম্প্রতিক সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স দলের সাফল্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার দক্ষতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছে।
বিশ্ব ক্রিকেটে স্পিনারদের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের স্পিনাররা মাসসেরা পুরস্কারের তালিকায় নিয়মিত জায়গা করে নিচ্ছেন। নভেম্বরের এই তালিকায় তাইজুলের নাম থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেট অগ্রগতির একটি ইতিবাচক প্রতিফলন। আইসিসির ভোটিং প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ জুরি এবং সমর্থকদের ভোট মিলিয়ে মাসের সেরা খেলোয়াড় নির্ধারিত হবে। তাইজুল ইসলাম পুরস্কারটি জিততে পারলে এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আরও একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হবে এবং স্পিনার হিসেবে তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও সুসংহত হবে।


