নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ভারতীয় প্রভাব ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জের ছাতক শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অনুষ্ঠিত ছাত্র নাগরিক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে অতীত সরকার, আঞ্চলিক ভূরাজনীতি, জুলাই অস্থিরতা এবং আগামীর রাজনৈতিক প্রসঙ্গ উঠে আসে।
সমাবেশ-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে ঢাকসু ভিপি দাবি করেন, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় প্রতিবেশী দেশের প্রভাব বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে বলে তার মত। বিশেষ করে গত ১৬ বছরে দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেছে এবং তা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একধরনের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টি করেছে বলে তার অভিযোগ।
তিনি আরও দাবি করেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে দেশ সুশাসন, আইনের শাসন ও ভোটাধিকারের সংকটে পড়েছিল। তার বক্তব্য অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, এসব পরিস্থিতি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।
জুলাই মাসে সৃষ্ট রাজনৈতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকসু ভিপি জানান, ওই সময় ছাত্র ও তরুণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, যা তিনি সমাজ-রাজনীতির পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেন। তার দাবি অনুযায়ী, আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হন, যা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, এই আন্দোলন নতুন প্রজন্মকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করেছে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেছে।
ঢাকসু ভিপি জানান, জুলাইয়ের ঘটনার পর দেশব্যাপী যে নতুন রাজনৈতিক ধারা তৈরি হয়েছে, তা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে। তার মতে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অবাধ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের এমন নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে যারা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক রাখা। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত না হয়।
সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আলোচনায় আসে। ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকসু ভিপি সুনামগঞ্জ-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী একজন প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানান। তার বক্তব্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের রাজনৈতিক পরিবেশ ও প্রার্থীদের অবস্থানও উঠে আসে। তিনি বলেন, দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য।
এসময় তিনি সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে দোয়ার আহ্বান জানান, যা সমাবেশস্থলে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে আলোচিত হয়। তার বক্তব্যে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গও উঠে আসে, যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক তাপমাত্রার মধ্যেও জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
সাদিক কায়েমের এসব বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আঞ্চলিক প্রভাব, জাতীয় রাজনীতি, নির্বাচন, তরুণদের ভূমিকা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভবিষ্যৎ—এসব বিষয় নিয়ে তার মন্তব্য বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন বক্তব্য বর্তমানে দেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ ও পরিবর্তনমুখী পরিবেশের প্রতিফলন বহন করে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রবাহকেও প্রভাবিত করতে পারে।


