জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লন্ডনের লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে তাঁর দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে যুক্ত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিকিৎসা প্রক্রিয়ার সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
বেগম জিয়ার লন্ডনে চিকিৎসার সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্ত আছেন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. রিচার্ড বিয়েল। তিনি বাংলাদেশে গিয়ে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা হিসেবে উন্নত পরিকাঠামোসমৃদ্ধ হাসপাতালে স্থানান্তরের সুপারিশ দেন। ডা. বিয়েল লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার আইসিইউ-সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। তাঁর উপস্থিতি ও হাসপাতালের সক্ষমতাকে বিবেচনায় রেখে এখানেই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, লন্ডন ব্রিজ হাসপাতাল যুক্তরাজ্যের অন্যতম আধুনিক চিকিৎসাসুবিধাসম্পন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক রোগীদের জন্য উন্নত সেবা প্রদানের সক্ষমতার কারণে হাসপাতালটি বিশেষভাবে পরিচিত। এটি পরিচালিত হয় এইচসিএ হেলথকেয়ার ইউকের অধীনে, যা দেশে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত। হাসপাতালটি কেয়ার কোয়ালিটি কমিশন (সিকিউসি) থেকে ‘অসাধারণ’ রেটিং পেয়েছে, যা মানসম্মত সেবা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাজধানী লন্ডনের টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত লন্ডন ব্রিজ হাসপাতাল জটিল রোগের সমন্বিত চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরে সুনাম অর্জন করেছে। বিশেষ করে হৃদরোগ, ক্যানসার, লিভার-সম্পর্কিত সমস্যা ও বহুবিধ অঙ্গের জটিল পরিস্থিতিতে বিশেষায়িত চিকিৎসা দিতে হাসপাতালটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজ করে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ টিমের সমন্বয়ে এটি বহু দেশের গুরুতর রোগীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
হাসপাতালটির লেভেল-৩ আইসিইউ ইউনিট বেসরকারি খাতে যুক্তরাজ্যের অন্যতম শক্তিশালী সুবিধা হিসেবে পরিচিত। এখানে ২৪ ঘণ্টা অনসাইট কনসালট্যান্ট উপস্থিত থাকেন, যা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে। এ ইউনিটে রয়েছে উন্নত ভেন্টিলেশন সিস্টেম, বহুবিধ অঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের জন্য লাইফ-সাপোর্ট প্রযুক্তি এবং উচ্চমানের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক রোগীদের জন্য সমন্বিত আইসিইউ সুবিধা থাকার কারণে বিভিন্ন জটিল অবস্থায় থাকা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে লন্ডন ব্রিজ হাসপাতাল একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার জটিলতা বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মানের বিশেষায়িত আইসিইউ সাপোর্ট ও বহুমাত্রিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হাসপাতাল ও দীর্ঘদিনের চিকিৎসা-পর্যবেক্ষণে থাকা বিশেষজ্ঞদের সংযোগ চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিমানযোগে রোগী স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী, মেডিকেল টিম এবং আন্তর্জাতিক চিকিৎসা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়েও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। গুরুতর রোগীদের বিদেশে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, আইসিইউ সাপোর্ট ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর যেকোনো সময় লন্ডনের উদ্দেশে রোগী স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
খালেদা জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। দেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরও তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে বহুমুখী চিকিৎসা প্রয়োজন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে উন্নত চিকিৎসা পরিবেশে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জটিলতা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চিকিৎসা-সংক্রান্ত এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় চিকিৎসক, পরিবার এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লন্ডনে চিকিৎসা শুরু হলে বহুমাত্রিক রোগ পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে।


