বিনোদন ডেস্ক
দীর্ঘদিন অভিনয়জগতে নিয়মিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পর্দায় তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না—এমন মন্তব্যের জবাবে অভিনেত্রী কুসুম শিকদার জানান, চলচ্চিত্রে ফিরে এলেও কাজের নির্বাচনে তিনি আগে থেকে বেশি সতর্ক। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর দীর্ঘ বিরতি, প্রাপ্ত কাজের প্রস্তাব এবং শিল্পচর্চা সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান, সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘শরতের জবা’ মুক্তির পর তিনি ১২টি নতুন ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলেন, তবে মান ও প্রস্তুতিকে বিবেচনায় নিয়ে সেসব কাজ গ্রহণ করেননি।
সাক্ষাৎকারে কুসুম শিকদার বলেন, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়মিতই আসে, তবে তিনি সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, চলচ্চিত্র একটি দীর্ঘমেয়াদি শিল্পপ্রক্রিয়া, যেখানে গল্প, নির্মাণ ও সামগ্রিক পরিকল্পনার দৃঢ়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি প্রস্তাবেই তিনি মনে করেছেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বা পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে সেই কাজগুলোতে যুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, কাজের ক্ষেত্রে তাঁর ধরণ ধীর এবং মনোযোগী। তাঁর বিশ্বাস, সময় নিয়ে কাজ করলে মানোন্নয়ন সম্ভব হয়, যা একটি সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণে অপরিহার্য। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘শরতের জবা’ চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করেন। ছবিটি শেষ করতে তাঁর প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। এছাড়া চিত্রনাট্য ও গল্প রচনার ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তাও তিনি তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, শিল্পসম্মতভাবে প্রস্তুত ও সুগঠিত প্রকল্পে যুক্ত হওয়াই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অভিনেত্রী জানান, তিনি নিয়মিত কাজের চাপে নয়, বরং গুণগত মান নিশ্চিত করেই সামনে এগোতে চান। চলচ্চিত্রে অংশ নেওয়া তাঁর কাছে শুধুমাত্র উপস্থিতি ধরে রাখার বিষয় নয়; বরং প্রতিটি চরিত্র ও প্রকল্পের মাধ্যমে দর্শকের কাছে অর্থবহ কিছু পৌঁছে দেওয়াই তাঁর মূল লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা—এবং সেটির জন্য প্রয়োজনীয় সময় নেওয়া—তাঁর জন্য নিয়মিতভাবে কাজ করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং শিল্পচর্চার জন্যও তা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণপ্রক্রিয়া ও গল্পনির্ভর চলচ্চিত্রে আগ্রহ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে শিল্পীরা কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হয়ে উঠছেন। কুসুম শিকদারের বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট হয় যে, মানসম্মত এবং পরিকল্পিত চলচ্চিত্র নির্মাণই তাঁর প্রথম পছন্দ। তিনি মনে করেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ শুরু করলে তার গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে দর্শক, শিল্পী ও চলচ্চিত্রশিল্প—তিন পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।
এ ছাড়া তিনি জানান, শিল্পী হিসেবে তাঁর কাজের লক্ষ্য দর্শনস্পষ্ট—তিনি এমন প্রকল্পে কাজ করতে চান যেগুলো গল্প, নির্মাণশৈলী ও শিল্পমানের দিক থেকে শক্তিশালী। এই ধরনের কাজ তৈরি করতে নির্মাতা ও শিল্পী উভয়েরই সময়, মনোযোগ ও পরিশ্রম প্রয়োজন। তাই যেসব প্রস্তাবে তিনি আত্মবিশ্বাসী নন বা যেসব কাজের প্রাথমিক প্রস্তুতি দুর্বল মনে হয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করেননি।
বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনে অনেক সময়ই দ্রুত কাজ শেষ করার চাপ থাকে। কিন্তু কুসুম শিকদারের মতে, একটি মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণে কমপক্ষে দুই বছর সময় ধরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং শুটিং পরিচালনা করাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তিনি মনে করেন, ধৈর্য ধরে কাজ করলে চূড়ান্ত ফলাফল দর্শকের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়। তাঁর মতে, শিল্পচর্চা কখনোই তাড়াহুড়ো করে সম্পন্ন করার বিষয় নয়; বরং তা সময় ও মনোযোগ সাপেক্ষ একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া।
সাক্ষাৎকারে কুসুম শিকদার আরও বলেন, তিনি ভবিষ্যতে অবশ্যই চলচ্চিত্রে কাজ করতে চান, তবে তা হবে একান্তই মনমতো, প্রস্তুত ও গল্পনির্ভর প্রকল্পে। তাঁর বিবেচনায়, দীর্ঘ বিরতির পর আবারও নিয়মিত কাজ শুরু করার চেয়ে যুক্তিযুক্ত ও লক্ষ্যনির্ভরভাবে কাজ বাছাই করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, দর্শককে ভালো গল্প ও মানসম্মত নির্মাণ উপহার দেওয়ার দায়িত্ব শিল্পীরও রয়েছে, এবং সেই দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি কাজের প্রতি কঠোর নির্বাচন নীতি অনুসরণ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্রশিল্পে নতুন নির্মাতা ও তরুণ প্রযোজকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ কারণে কাজে বৈচিত্র্য ও নতুনধারা আসলেও, শিল্পীরা প্রাথমিক প্রস্তুতি ও প্রকল্পের দৃশ্যমান পরিকল্পনা যাচাই করে তবেই অংশ নেওয়ার বিষয়ে অধিক সচেতন হয়েছেন। কুসুম শিকদারের বক্তব্যও একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। গুণগত মানের নিশ্চয়তা ছাড়া তিনি কোনো প্রকল্পে যুক্ত হতে চান না।
ফলে দীর্ঘদিন পর্দায় অনিয়মিত দেখা গেলেও ভবিষ্যতে তিনি উপযুক্ত ও প্রস্তুত চলচ্চিত্রে অংশ নেবেন বলে তাঁর বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শিল্পচর্চায় তাঁর এই মনোভাব বাংলাদেশি চলচ্চিত্রশিল্পে মানোন্নয়নের প্রচেষ্টাকে আরও উৎসাহিত করবে বলে স্থানীয় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা করা হচ্ছে।


