জাতীয় ডেস্ক
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীতে জাতীয় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আবদুল গণি রোডের নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সমাবেশে আয়োজকেরা জানান, সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অবস্থায় থাকায় সারাদেশের ১২৪টি শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তারা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান হওয়ায় নতুন বেতন কাঠামো দ্রুত কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বক্তারা অভিযোগ করেন, বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা পরিষদের পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে প্রধান দাবি হিসেবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নতুন বেতন কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি এবং ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করার কথা বলা হয়। বক্তাদের মতে, বেতন অসমতা দূর করতে এবং কর্মচারীদের মৌলিক চাহিদা পূরণে নতুন কাঠামো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারা বলেন, বিদ্যমান কাঠামোতে পদের মানোন্নয়ন, দায়িত্ব অনুযায়ী গ্রেড নির্ধারণ এবং সময়োপযোগী আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয় দফা হিসেবে তারা টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও শতভাগ পেনশন ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানান। পাশাপাশি সচিবালয়ের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নে জাতীয় সার্ভিস কমিশন গঠনের আহ্বান আসে। বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীরা পেশাগত উন্নয়ন, পদোন্নতি ও সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছেন। নতুন কমিশন গঠিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে একটি স统িত কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে।
তৃতীয় দফা দাবিতে ওয়ার্কচার্জ, কন্টিনজেন্ট পেইড, মাস্টাররোল ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের কথা উল্লেখ করা হয়। সমাবেশে বক্তারা জানান, এ ধরনের অস্থায়ী কর্মচারীরা দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করলেও নিয়োগ স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া না থাকায় তাদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা দূর হচ্ছে না। তারা বলেন, নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলে কর্মচারীদের মধ্যে স্থিতিশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।
চতুর্থ দফা দাবি হিসেবে ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত রেশন সরবরাহ, আউটসোর্সিং নিয়োগপদ্ধতি বাতিল, শূন্যপদে রাজস্বখাতে নিয়োগ এবং ব্লকপোস্টে পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। বক্তারা দাবি করেন, আউটসোর্সিং ব্যবস্থার কারণে বহু সরকারি দপ্তরে কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা কমে গেছে এবং নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ব্যাহত হচ্ছে। রেশন-ব্যবস্থা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
পঞ্চম দফা দাবিতে আইএলও কনভেনশনের ৮৭ ও ৯৮ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা বলেন, সংগঠন গঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ আলোচনার সুবিধা নিশ্চিত হলে কর্মচারীদের পেশাগত অধিকার রক্ষা আরও কার্যকর হবে। তারা উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক শ্রমমান অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপস্থাপনের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আজিম। সূচনা বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান নোমানুজ্জামান। বক্তারা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে অতিরিক্ত মহাসচিব কামাল হোসেন শিকদার বলেন, কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তিনি বলেন, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই বেতন কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি ও পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় কর্মচারীরা পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারাদেশে আরও কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। তারা বলেন, জনসেবা প্রদানকারী কর্মচারীদের দাবি পূরণ হলে প্রশাসনের কার্যকারিতা ও জনসেবার মান উন্নত হবে, যা সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


