খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে আজ রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে আজ রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানো হবে কি না, এ বিষয়ে আজ রাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, এভারকেয়ার হাসপাতালে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড রাতের বৈঠকে তাঁর বিদেশ যাত্রা নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।

মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিনের জটিল শারীরিক অবস্থার কারণে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে আলোচনা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সম্ভাবনা পর্যালোচনা করতে চিকিৎসক দল সর্বশেষ পরীক্ষার রিপোর্ট মূল্যায়ন করছে। বোর্ডের সিদ্ধান্তই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গত শুক্রবার সকালে কাতারের আমিরের পাঠানো নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মপরিচালনাগত ত্রুটির কারণে সেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ঢাকায় পৌঁছাতে না পারায় যাত্রা স্থগিত হয়। পরবর্তীতে কাতার সরকার জার্মানির একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কাতার সরকারের পক্ষ থেকেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। নতুন বিমানের সময়সূচি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে চিকিৎসক দলকে অবহিত করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত স্থানান্তর সম্ভব হয়।

এদিকে শুক্রবার চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বেগম খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কোপি সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন জানান, রিপোর্ট অনুযায়ী পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ শারীরিক স্থিতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। চিকিৎসকেরা জানান, দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর কারণে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও উন্নত থেরাপির প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী এবং যুক্তরাজ্যপ্রবাসী চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান। এরপর তিনি সরাসরি হাসপাতালে যান এবং মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। আগামী চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণে তাঁর মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।

দীর্ঘদিন ধরেই বেগম খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, ফুসফুসের সমস্যা এবং চোখের নানা রোগে ভুগছেন। এসব দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণে তাঁর শারীরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিনের চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর নিয়মিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তিনি পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।

বর্তমানে তিনি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ১৩তম দিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা দিনব্যাপী ওঠানামা করছে এবং উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে অবস্থার উন্নতি দীর্ঘসময় ধরে স্থিতিশীল রাখা কঠিন হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা সম্পূর্ণভাবে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, চিকিৎসক দলের পরামর্শ অনুযায়ী এবং পরিবারের সম্মতিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় সূত্র অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা ও বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেওয়া এ ঘটনার পরবর্তী সিদ্ধান্ত বিএনপির ভবিষ্যৎ সাংগঠনিক কর্মকৌশলকেও প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও এ বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

মেডিক্যাল বোর্ডের রাতের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে কি না। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চিকিৎসক, পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ