জেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামের তারুণ্যের উৎসব সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম দেশের রাজনীতিতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, স্থানীয় ভিত্তিতে রাজনীতি চর্চা এবং জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তরুণদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নিয়ে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবু সাদিক কায়েম বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হলে তরুণদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তাঁর মতে, নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য রাজনীতিকে স্থানীয় বাস্তবতা, জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় করে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক বাস্তবতা থেকে দূরে থেকে রাজনীতি পরিচালনার প্রবণতা জনআস্থা ক্ষুণ্ন করে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত দেশের মানুষ ও তাদের প্রত্যাশা।
বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নেতৃত্ব বা পরিবর্তনের ধারণা তখনই বাস্তব রূপ পায়, যখন রাজনৈতিক কর্মীরা দেশের মানুষের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাঁর মতে, বিদেশে অবস্থান করে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নয়, বরং জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করাই বেশি প্রয়োজন। তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান, স্থানীয় মানুষের সমস্যা, উন্নয়ন এবং সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে নিবিড়ভাবে জানার মাধ্যমে রাজনীতিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হতে।
সমাবেশে আবু সাদিক কায়েম ন্যায়-ভিত্তিক রাজনীতির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক যাত্রায় ন্যায়, জবাবদিহি এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু নানা কারণে এসব লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তাঁর মতে, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে রাজনীতি পরিচালনা করতে হলে তরুণদের আদর্শিক অবস্থান সুস্পষ্ট হওয়া জরুরি, যা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৫৪ বছরে রাষ্ট্র ও রাজনীতির যে অগ্রগতির প্রত্যাশা ছিল, তার অনেক অংশই বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিভেদ ও দীর্ঘমেয়াদি বিরোধের কারণে বিগত ১৭ বছরে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বিভাজন কমিয়ে নাগরিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক শক্তিগুলো যদি জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে কাজ করে, তাহলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারাও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তরুণদের দায়িত্ব এবং সামাজিক পরিবর্তনে রাজনৈতিক সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দেন। উপস্থিত নেতাদের মধ্যে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা তরুণদের সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, নৈতিকতা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ও সমাবেশ বেড়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তরুণদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তরুণ ভোটারদের প্রভাব আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোও তাই তরুণদের সাথে যোগাযোগ জোরদার করছে। এ সমাবেশকেও সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সমাবেশে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে তরুণ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বে তরুণদের অংশগ্রহণ, স্থানীয় উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বক্তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। অনুষ্ঠানের শেষে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।
এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জ এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। তরুণদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের ধারণা। সমাবেশে উত্থাপিত বক্তব্য ও আলোচনা তরুণদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করেন।


