বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর শহীদ হোছাইন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক মহিলা সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি, ভোটারদের ভূমিকা এবং বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন।

সমাবেশে তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ নিজেদের ভোটের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করবে এবং এ নির্বাচন রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘিরে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করতে পারে বলে তিনি মত দেন।

সমাবেশে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের সম্ভাব্য পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেন যে, অতীত সময়ে ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে তাঁর দল মনে করে। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাহত ছিল, যার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ ভোট প্রদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাঁর মতে, নামমাত্র সাংবিধানিক কাঠামো থাকলেও বাস্তবে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সংকুচিত ছিল।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য এ সময়ে পূর্ববর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সমালোচনামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে এসব বক্তব্য নেতার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে প্রদত্ত বলে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেগুলো স্বাধীনভাবে যাচাইযোগ্য অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপিত হয়নি।

তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে এবং এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাঁর ভাষ্য মতে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রত্যাশা এবং জনগণের আগ্রহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করতে পারে।

সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমদ অঞ্চলে তাঁর সাম্প্রতিক গণসংযোগ কার্যক্রম সম্পর্কেও উপস্থিতদের অবহিত করেন। এর আগে তিনি চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, লক্ষ্যারচর ও বরইতলী ইউনিয়নে বিভিন্ন সভা ও পথসভায় অংশ নেন। এসব কার্যক্রমে তিনি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দলের অবস্থান তুলে ধরেন।

মহিলা সমাবেশে বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলীসহ অন্যরা। সমাবেশে তারা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক কর্মসূচি জোরদার হওয়ায় চকরিয়া এবং আশপাশের এলাকায় রাজনৈতিক পরিবেশ আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না—এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রত্যাশা এবং আলোচনা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণা ঘিরে পুরো এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের প্রচারণা, দলীয় কৌশল এবং স্থানীয় ইস্যুগুলো আরও গুরুত্ব পাবে। স্থানীয় উন্নয়ন, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান—এই বিষয়গুলো ভোটারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

সমাবেশ শেষে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ স্থানীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। তিনি নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং গণতান্ত্রিক শক্তির প্রসার—এই দুই বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে, যা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ