জেলা প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মোবাইল ফোন ও অনলাইন গেম ‘ফ্রি ফায়ার’-এর আইডি কেনার অর্থ জোগাড় করতে নিজ বাড়িতে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছে এক কিশোর। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো—রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকার বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিল এবং ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহ আলম। তিনজনই স্থানীয় কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পুলিশ জানায়, তারা কিশোর বয়সে অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ায় উচ্চমূল্যের গেম আইটেম ও মোবাইল কেনার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনার আয়োজন করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে শাহ আলমের হাতে নতুন মোবাইল ফোন দেখে তার পরিবার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে সে প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পরিবারের চাপ ও সন্দেহের কারণে স্থানীয়রা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তিন কিশোরকে স্থানীয়রা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ডাকাতির ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার দিন তিন কিশোর পরিকল্পিতভাবে বাড়ির আলমারি ভেঙে টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং পরে তা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া এক কিশোরের বাবা বলেন, কিছু বন্ধুর প্রভাবে তার ছেলে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি জানান, ছেলেদের বয়স কম এবং তারা বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে না বুঝে গেম খেলার নেশায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশের কাছে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়েছে এবং উদ্ধার হওয়া টাকাসহ স্বর্ণালংকার জমা দেওয়া হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে শাহরিয়ারের বাবা থানায় একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাড়িতে প্রবেশ করে শাহরিয়ারকে বেঁধে রেখে মারধর করে এবং আলমারি ভেঙে নগদ ১০ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আশেপাশের তথ্য সংগ্রহ করে।
পুলিশের সন্দেহ তৈরি হয় ঘটনার কয়েকটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় পর্যালোচনার পর। তদন্তে দেখা যায়, আলমারি ভাঙার ধরন, ঘরের ভেতরের এলোমেলো অবস্থান এবং ভুক্তভোগীর বিবরণে একাধিক অসঙ্গতি ছিল। পরে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তিন কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় এবং তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছে যে তারা অনলাইন গেম ও মোবাইল কেনার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। সেই কারণে শাহরিয়ারের বাড়িতে ডাকাতির গল্প সাজানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শাহরিয়ার নিজেই হাত-পা বেঁধে আত্মীয়স্বজনকে বিভ্রান্ত করেন এবং পরে দু’জন বন্ধুকে নিয়ে আলমারি ভেঙে টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায়।
ওসি আরও বলেন, কিশোরদের মধ্যে অনলাইন গেমে আসক্তি দিন দিন বাড়ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবকদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং সন্তানদের অনলাইন ব্যবহারের ওপর নজরদারি জরুরি।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের মতে, সামাজিক মাধ্যম, অনলাইন গেমিং এবং কিশোরদের অযাচিত স্বাধীনতা অনেক সময় তাদের ঝুঁকিপূর্ণ পথে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোরদের প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যালান্স না থাকলে সামাজিক ও পারিবারিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়ে।
পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং কিশোরদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও ঘটনাটির পেছনে অন্য কেউ যুক্ত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


