জাতীয় ডেস্ক
নির্বাচনের সময় দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা এবং যেখানে স্থায়ী বিদ্যুৎব্যবস্থা নেই সেখানে বিকল্প আলো ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভোটগ্রহণের সময় একধাপ বাড়ানো হওয়ায় সকাল থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ কারণে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ দুর্বল বা অনুপস্থিত, সেখানে বিকল্প আলোর ব্যবস্থা রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়, যা পূর্বের তুলনায় আধা ঘণ্টা আগে। প্রাকৃতিক আলো থাকা সত্ত্বেও ভোট শেষে গণনার সময় যাতে কোনো জটিলতা না হয়, তাই প্রতিটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বা বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এ সময় সম্প্রতি রংপুরে এক মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, ঘটনাটি তদন্তে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো গুরুতর অপরাধের মতো এ ঘটনাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন যে নির্বাচনের আগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, তবে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনা সম্পূর্ণ নির্মূল করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব না হলেও প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনী সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
গণভবনকে গণমিউজিয়াম হিসেবে উন্মুক্ত করার বিষয়েও আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, ভবনের সংস্কার ও প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রবেশব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা এ পরিকল্পনার অন্যতম অংশ।
নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না—এই সংশয় দূর করতে সরকার নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় বার্তা প্রদান করছে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে তথ্য প্রচারে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছাতে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, মাঠে কোনো দলকে প্রচারণা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে না। সব দলের প্রচারণা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো দলের অভিযোগ থাকলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অভিযান জোরদার করেছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের তথ্য নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বহু আগে থেকেই বডি ক্যামেরা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যদের এসব ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ নির্বাচন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। ভোটের দিন থেকে ফল গণনা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করতে পারেন।


