মোহাম্মদপুরের বাড়ি থেকে মা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার; গৃহকর্মী পালিয়ে গেছে

মোহাম্মদপুরের বাড়ি থেকে মা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার; গৃহকর্মী পালিয়ে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

সোমবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫ সকাল মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল আবাসিক বাড়ি থেকে গৃহবধু ও তার কন্যার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে—ঘটনার চার দিন আগে ওই বাড়িতে কাজ শুরু করা গৃহকর্মী (নিজেকে আয়েশা বলে পরিচয় দেয়া) সম্ভাব্য নেপথ্য সুরুকারী; তিনি ঘটনার পর বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন। ঘটনাস্থল থেকে তৎক্ষণাৎ বাড়ির দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং মামলা-তদন্ত চলছে।

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, নিহতদের বাড়ির একজন প্রতিবেশী ও ভেতরেরসূত্র জানায়, মালাইলা আফরোজ নামের গৃহবধু এবং তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ নামে নবম শ্রেণি শিক্ষার্থী ওই বাড়িতে থাকতেন। নিহত নাফিসার পিতা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। পুলিশ ও বাড়ির সূত্রগুলো বলছে, সোমবার সকাল প্রায় সাতটায় নাফিসার পিতা স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি ত্যাগ করেন। পরে সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে বাড়ি থেকে কাঁধে স্কুল ব্যাগ ও স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় গৃহকর্মী আয়েশা বেরিয়ে যান—সিসিটিভি ফুটেজে সেই দৃশ্য ধরা পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসার পর নাফিসার বাবা স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে এবং পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানায়, সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে খবর পেয়ে প্রথমে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মেয়েটিও মারা যান। লাশ দুটিই সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতলে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে; সেগুলো যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক পরীক্ষার অপেক্ষা চলছে।

বাড়ির স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, ঘটনার চার দিন আগে একটি তরুণী কাজের সন্ধানে বাড়ির গেট এসে দারোয়ান খালেককে কথিতভাবে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেন। পরে তাকে পরিবারের পরিচিতরা বাড়িতে নিয়ে এসে কাজ দেয়া হয়। পরিবার সূত্রে জানায়, ওই নারী নিজের নাম আয়েশা বলেছেন এবং তার বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তিনি তাদের জানিয়েছিলেন যে গ্রামের বাড়ি রংপুর এবং জেনেভা ক্যাম্পে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকেন। একই সঙ্গে তিনি শরীরে আগুনে পুড়ার ক্ষতের কথাও জানিয়েছিলেন—পরিবারের লোকজন তা শুনেছেন। নিহত পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই কর্মী প্রথম দুই দিন নিয়মমাফিক কাজ করেছেন; গতকাল তিনি সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িতে আসেন।

স্থানীয় বস্তিতে কাজের সন্ধানকারীদের বিষয়ে বাড়ির জেলা পুলিশ ও অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার পর পুলিশ বাড়ির দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে এবং আশপাশের সিসিটিভি রেকর্ড মনিটরিং ও প্রতিবেশী-সাক্ষীদের বিবরণ সংগ্রহ করছে। পুলিশ আরও বলেছেন যে, আয়েশার পরিচয় নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসন ও সোশ্যাল সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে; সশরীরে উপস্থিত না থাকা বা পালিয়ে থাকা সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এই হত্যাকাণ্ড এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা, বাড়িতে বাইরের কর্মী নিয়োগ এবং শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে। অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি তুলেছেন এবং প্রতিবেশী এলাকা ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে তথ্য জানানো হয়েছে। নাফিসার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনাসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে; বিদ্যালয় পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমন্বয় করা হবে বলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাও বলা হয়েছে।

অনুসন্ধান চালাচ্ছে মহানগর পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট থানা; ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত হত্যার প্রকৃত কারণ ও সময়রেখা নির্ধারণ অসম্ভব বলে পুলিশ জানায়। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, রক্তালয় ও অস্ত্র-চিহ্ন বিশ্লেষণসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করার চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীরা অনুরোধ করেছেন যে কোনো ধরনের গোপনীয় বা প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকলে নিকটস্থ থানায় জানাতে।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ