এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে

 

জাতীয় ডেস্ক

আগামী বুধবার এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ রেকর্ডের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কমিশন নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সোমবার জানান, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে কমিশন প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সিইসির ভাষণ রেকর্ডের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, তাই সকল আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন তফসিল ঘোষণার দিন ও সময় নির্ধারণে কমিশন প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তফসিল ঘোষণার দিন সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভোটের তারিখসহ মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই–বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের সময়সূচি তুলে ধরবেন। কমিশনের নীতি অনুযায়ী, এসব তথ্য জনগণের প্রতি সরাসরি বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ করতে সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করা হয়।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছিলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন ঘোষিত হতে পারে। কমিশনের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি ও আনুষঙ্গিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা করে চূড়ান্তভাবে ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হবে। এই সময়ের মধ্যেই ভোট আয়োজনের জন্য মাঠপর্যায়ের সব প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণত সিইসি সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সেখানে ভোটের সময়সূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। ভাষণ রেকর্ডের জন্য সম্প্রচার সংস্থাগুলোকে পূর্বেই অবহিত করা হয়, যাতে প্রযুক্তিগত বা প্রক্রিয়াগত কোনো ত্রুটি না থাকে। এ কারণে ভাষণ রেকর্ডের প্রস্তুতি নেওয়া তফসিল ঘোষণার এক গুরুত্বপূর্ণ পূর্বধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে। ভোটার তালিকা, কেন্দ্র স্থাপন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নিরাপত্তা সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিশন ইতোমধ্যে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের বিধিবিধান মেনে চলা, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ এবং প্রচার–প্রচারণায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে।

অন্যান্যদিকে, ভোট গ্রহণকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও নির্ভরযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ব্যালট পেপার, কেন্দ্রভিত্তিক লজিস্টিকসহ সব সরঞ্জাম প্রস্তুতের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গন আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী চূড়ান্তকরণ, জোটবদ্ধ কৌশল, মাঠপর্যায়ে প্রচার পরিকল্পনা ও সমর্থক সংগঠনের প্রস্তুতি জোরদার করবে। ভোটারদের জন্যও তফসিল ঘোষণার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমের কাউন্টডাউন শুরু হয়।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। তফসিল ঘোষণার পর সব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে এবং ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। কমিশন আশা করছে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ