বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন তারেক রহমান

বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন তারেক রহমান

রাজনীতি ডেস্ক

রাজধানীতে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ ধরনের সমন্বিত পরিকল্পনা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে নেই।

অনুষ্ঠানটি গতকাল ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারেক রহমান বিএনপির প্রস্তাবিত বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনার সার্বিক দিক তুলে ধরেন এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের এসব তথ্য基层ে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নারীশিক্ষা বিস্তার, ক্রীড়া উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, বেকারত্ব নিরসন, তরুণদের প্রশিক্ষণ এবং শিল্প খাতের অগ্রগতির জন্য বিএনপি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক বেশ কিছু প্রস্তাবিত উদ্যোগও তিনি ব্যাখ্যা করেন। তারেক রহমানের দাবি, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা কেবল বক্তব্য বা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সম্ভব নয়; প্রয়োজন প্রস্তুতিমূলক কৌশল ও বাস্তবভিত্তিক নীতি। জনগণের খাবার, আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য পরিকল্পনাভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা অপরিহার্য। তারেক রহমান জানান, এসব কারণেই জনগণ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে বিএনপির কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করে।

অতীত প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, সময়ভেদে বিভিন্ন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সীমানা ইস্যু ও আন্তর্জাতিক জলবণ্টন প্রশ্নে বিএনপির পূর্ববর্তী উদ্যোগ দেশের স্বার্থরক্ষা করেছে। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমনে বিএনপির গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

নারী উন্নয়ন প্রসঙ্গে তারেক রহমান জানান, দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই তাদের স্বাবলম্বী করা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, ক্ষমতায় এলে প্রায় চার কোটি নারীপ্রধান পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে, যা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে দুস্থ, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনাও তিনি উল্লেখ করেন।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনানুগ বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। দলের কেউ বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে দলগত পক্ষপাত দেখানো হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন অর্জনে এলাকাভিত্তিক টিম গঠন করে ঘরে ঘরে গিয়ে দলের পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরতে হবে। এজন্য লিফলেট বিতরণসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দেন তিনি। তারেক রহমানের মতে, দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে এবং সেসব পূরণে পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেওয়া তার বক্তব্যে তিনি মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষা কোনো বিশেষ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রতিদিনই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও প্রতিকারের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মানবাধিকার রক্ষায় দারিদ্র্য দূরীকরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ দারিদ্র্য মানবাধিকার বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ।

একই দিনে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময়েও অংশ নেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। সভায় বিএনপি মহাসচিবসহ সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং ন্যায়সংগত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, এসব লক্ষ্যে দল সংগঠিত থাকলে জনগণ দেশের উন্নয়নযাত্রায় সক্রিয় অংশীদার হবে। তিনি নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান এবং জনগণের বিশ্বাস অর্জনকে রাজনৈতিক কার্যক্রমের মূল ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেন।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ