জেলা প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এলাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পাইনাদী নতুন মহল্লার শাপলা চত্বর সংলগ্ন মায়া টি-স্টোরের সামনে পরিচালিত অভিযানে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আটক করে। পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ হাজার পিস ইয়াবা।
পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তির নাম জিহাদুল ইসলাম, যার বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায়। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লার পিএমএ মোড়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন। অভিযানের সময় সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাকে থামাতে গেলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে তল্লাশির মাধ্যমে তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি গত কয়েক বছর ধরে মাদক চোরাচালানের একটি রুট হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এই এলাকার কিছু অংশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের এই অভিযান পরিচালিত হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, আটক জিহাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ইয়াবাগুলো নিজের কাছে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ দাবি করছে। তবে এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, কিংবা তিনি কোন চক্রের সদস্য—এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরিদর্শক আরও জানান, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জিহাদুলকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং মামলার অগ্রগতির বিষয়ে নিয়মিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে ইয়াবা পাচারের বড় উৎস মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। সেখান থেকে বিভিন্ন চোরাচালান চক্রের মাধ্যমে ইয়াবা টেকনাফ হয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ এই চক্রগুলো অত্যন্ত সংগঠিত এবং বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত। সিদ্ধিরগঞ্জে ইয়াবা উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করছে যে এই রুটে সক্রিয় চক্রগুলো এখনো পুরোপুরি দুর্বল হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত টহল দিলেও মাদকবিরোধী অভিযানে আরও কঠোরতা প্রয়োজন। তারা মনে করেন, বিশেষ করে নতুন মহল্লা, খালপাড় ও শাপলা চত্বর সংলগ্ন কিছু এলাকায় মাদক কেনাবেচার তথ্য আগে থেকেই জানা থাকে, কিন্তু অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক অভিযান সম্ভব হয় না। তবে সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার তাদের মধ্যে নতুন করে আশাবাদ তৈরি করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ ইয়াবার উৎস, পরিবহন পদ্ধতি, আর্থিক লেনদেন এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্তে কাজ চলছে। তারা আশা করছেন, জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বড় কোনো নেটওয়ার্কের তথ্য মিলে গেলে ভবিষ্যতে একই ধরণের অভিযান আরও কার্যকর হবে। পাশাপাশি উদ্ধার করা ইয়াবার বিশুদ্ধতা, উৎস ও সম্ভাব্য উৎপাদন কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ল্যাবে প্রেরণ করা হবে।
মাদকবিরোধী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি স্থানে একবারে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হওয়া ইঙ্গিত দেয় যে মাদক চোরাচালানকারীরা আবারও বড় চালান পাচারের চেষ্টা করছে। এর ফলে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে কঠোর নজরদারি অপরিহার্য হয়ে উঠছে। তারা বলছেন, কেবল গ্রেপ্তার নয়, বরং উৎপাদন, পরিবহন, বিক্রি ও অর্থায়ন—এই চারটি স্তর চিহ্নিত করে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করলে মাদক নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের সহযোগিতার মাধ্যমে সন্দেহজনক কার্যক্রম শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীরা আশা করছেন, আটক জিহাদুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
গ্রেপ্তারের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হবে এবং এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা মনে করেন, এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে এলাকাবাসীর নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পাবে এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।


