জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি পদধারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বা সরকারের অন্য কোনো পদে দায়িত্বে থাকেন, তবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এবং কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি বলেন, প্রচলিত নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি অনুসারে সরকারি পদে দায়িত্ব পালনরত কেউ নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ সরকারের যেকোনো পদধারীর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকবে। কমিশনের মতে, এ ধরনের বিধান নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য অপরিহার্য।
তিনি আরও জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন সময়ানুগ ঘোষণা প্রক্রিয়া বাকি। তার ভাষায়, “তফসিল ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাস, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রজ্ঞাপন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধাপে ব্যবহৃত নির্দেশনা ও পরিপত্র—মোট প্রায় ২০ ধরনের নথি প্রস্তুত রয়েছে।”
ইসির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পরপরই এসব প্রজ্ঞাপন ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং সেল গঠন, এবং সামগ্রিক নির্বাচনী শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশেষ সেল চালু করা। এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও সুসংগঠিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নির্ধারিত কাঠামো অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের মতে, আচরণবিধির যে ধারাগুলো সরকারি পদধারীদের নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে, তা দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। তিনি বলেন, “যেহেতু প্রচারে অংশ নেওয়া যাবে না, সেহেতু প্রার্থী হওয়াও সম্ভব নয়। সরকারি দায়িত্বে থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা বা প্রচারে যুক্ত হওয়া আইনত অবৈধ।”
এদিকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রাহমান মাছউদ নির্বাচনী প্রস্তুতির আরেকটি দিক তুলে ধরে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ইসির দায়িত্ব নয়। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত থাকে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা, সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা এবং আচরণবিধি প্রয়োগ করা ইসির আওতায় আসবে।
তিনি আরও জানান, পোস্টাল ব্যালটে কোনো নিষিদ্ধ বা স্থগিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার করা হবে না। এর উদ্দেশ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখা এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা বজায় রাখা। কমিশন এবিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রস্তুত করেছে, যা তফসিল ঘোষণার পর কার্যকর হবে।
আব্দুর রাহমান মাছউদ বলেন, তফসিল ঘোষণার ভাষা ও কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হবে, যাতে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক থাকে।
আসন্ন সভা প্রসঙ্গে তিনি জানান, পরদিন দুপুরে নির্বাচন কমিশন পুনরায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এ বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও সংস্থার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ ধরনের ধারাবাহিক বৈঠক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সমন্বয় নিশ্চিত করে এবং সংবিধানসম্মত দায়িত্ব পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতে, ইসির এসব প্রস্তুতি ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সময়োপযোগী ও সুশৃঙ্খল করবে। সরকারি পদধারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা এবং তফসিল ঘোষণার পর কঠোর আচরণবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে ভোটগ্রহণকে আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে।


