খেলাধুলা ডেস্ক
চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে গুরুত্বপূর্ণ এক রাতে মাঠে নেমেছিল ইউরোপের প্রভাবশালী দুই ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ও চেলসি। সাম্প্রতিক সময়ের অনিয়মিত পারফরম্যান্স ও দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির চাপে থাকা লিভারপুল সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে পাওয়া পেনাল্টি গোলের সুবাদে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। অন্যদিকে, আক্রমণভাগে উজ্জ্বল শুরু সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে ছন্দ হারিয়ে আতালান্তার কাছে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয় চেলসি।
লিভারপুল গত কয়েক ম্যাচ ধরে প্রত্যাশিত ধারায় ছিল না। এর মধ্যেই দলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহর সাম্প্রতিক এক বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দলীয় পরিবেশে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করে। এর প্রভাব স্কোয়াড নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়; ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লিভারপুল তাকে সম্পূর্ণভাবে একাদশ থেকে বাদ দেয়। সালাহবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা দলটির জন্য ম্যাচটি ছিল নজর কাড়ার মতো।
সান সিরোর ম্যাচে শুরু থেকেই লিভারপুল নিয়ন্ত্রিত ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। বল দখল, মধ্যমাঠে গতিশীলতা এবং উইং থেকে আক্রমণ সাজানো ছিল তাদের মূল কৌশল। ইন্টারও পাল্টা আক্রমণে বেশ সক্রিয় থাকায় ম্যাচের গতি ছিল সমানতালে এগিয়ে চলা। প্রথমার্ধে উভয় দলই গোলের সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। লিভারপুলের ফরোয়ার্ড লাইন কয়েকবার প্রতিপক্ষ রক্ষণের মধ্যে ফাঁক খুঁজে পেলেও শেষ মুহূর্তে নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি ইংলিশ ক্লাবটি।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধেও পরিস্থিতি একই থাকে; লিভারপুল বল দখলে এগিয়ে থেকে আক্রমণ তৈরি করে, আর ইন্টার পাল্টা আক্রমণ নির্ভর কৌশলে খেলতে থাকে। ৮৮ মিনিটে আসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা। লিভারপুলের আক্রমণভাগের চাপে ইন্টার রক্ষণ ভুল করে বসে। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন এবং স্পট কিক নিতে এগিয়ে আসেন লিভারপুলের হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডার ডমিনিক সোবোসলাই। তার নিখুঁত শট ইন্টার গোলরক্ষকের নাগালের বাইরে চলে যায়। শেষ মুহূর্তের সেই গোলই ১-০ ব্যবধানে লিভারপুলকে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট এনে দেয়।
এই জয়ের ফলে ছয় ম্যাচে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিভারপুল তালিকার অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। যদিও সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পাঁচ নম্বরে রয়েছে ইন্টার মিলান। গ্রুপের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থান পরবর্তী ম্যাচগুলোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশেষ করে নকআউট পর্বে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রতিটি পয়েন্ট ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।
একই রাতে আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসি আতালান্তার মাঠে মাঠে নেমে শুরুতে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারিয়ে ফেরে। ম্যাচের শুরুতে এনজো মারোস্কার অধীনে চেলসির খেলায় দেখা যায় গতি ও আত্মবিশ্বাস। ২৫ মিনিটে রিস জেমসের নিচু ক্রসে জোয়াও পেদ্রোর দক্ষ ভলিতে লিড নেয় চেলসি। প্রথমে অফসাইডের সিদ্ধান্ত এলেও পরে ভিএআর পর্যালোচনায় গোলটি বৈধ ঘোষণা করা হয়।
প্রথমার্ধের শেষভাগে চেলসি স্কোরলাইন বাড়ানোর আরও সুযোগ পায়। তবে আক্রমণভাগের অনিশ্চয়তা এবং আতালান্তার গোলরক্ষকের সজাগ উপস্থিতি চেলসিকে দ্বিতীয় গোল পেতে দেয়নি। ম্যাচের গতি বদলে যায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। মধ্যমাঠে বল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় চেলসির ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
৫৫ মিনিটে ডানদিক থেকে চার্লস দে কেতেলায়ের দারুণ ক্রসে হেডে গোল করেন গিয়ানলুকা স্কামাকা। এতে ম্যাচে সমতা ফেরে। সমতার পর আতালান্তা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং বল দখল ও আক্রমণে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। চেলসির রক্ষণ কয়েকবার চাপ সামাল দিলেও আক্রমণে শক্ত প্রতিআক্রমণ গড়তে ব্যর্থ হয়।
৭৮ মিনিটে আতালান্তা দ্বিতীয় গোলের দারুণ সুযোগ পায়, কিন্তু চেলসির গোলরক্ষক রবার্ট সানচেস অবিশ্বাস্য একহাতে সেভ করে দলকে বাঁচান। তবে ৮৩ মিনিটে আর রক্ষা হয়নি। দে কেতেলায়ে একক দক্ষতায় বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে শক্তিশালী শটে গোল করেন। এতে আতালান্তা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেলেও জোয়াও পেদ্রোর শট গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়।
৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আতালান্তা তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করে ১১তম স্থানে রয়েছে চেলসি। এই পরাজয় গ্রুপে তাদের নকআউট পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনাকে জটিল করেছে। পরবর্তী ম্যাচগুলোতে পয়েন্ট হারানোর সুযোগ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।


