খেলাধুলা ডেস্ক
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফিফা পিস প্রাইজ’ প্রদানকে ঘিরে মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থা ফেয়ারস্কোয়ার ফিফার নীতিশাস্ত্র কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিক তদন্তের আবেদন করেছে। সংস্থাটির দাবি, একজন বর্তমান রাজনৈতিক নেতাকে এ ধরনের পুরস্কার দেওয়া ফিফার নিরপেক্ষতার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রশাসনের জন্য উদ্বেগজনক।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ইনফান্তিনো ট্রাম্পকে পুরস্কারটি তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় কেনেডি সেন্টারে, যেখানে দুইজনের পাশাপাশি অবস্থান ও আনুষ্ঠানিকতার ধরন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে একটি বড় স্বর্ণমণ্ডিত ট্রফি, একটি মেডেল এবং একটি সনদ প্রদান করেন ইনফান্তিনো। বক্তব্যে তিনি জানান, নেতৃত্বের প্রতিফলন হিসেবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবং তিনি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।
পুরস্কার প্রদানের পর ইনফান্তিনো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া কিছু পোস্টে ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। অভিযোগে বলা হয়েছে, একজন বৈশ্বিক ক্রীড়া সংস্থার প্রধানের এমন প্রকাশ্য অবস্থান রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ধারণা সৃষ্টি করতে পারে এবং ফিফার নিরপেক্ষতা নীতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
ফেয়ারস্কোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ইনফান্তিনো ফিফার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার অন্তত চারটি বিধান লঙ্ঘন করেছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফিফা সভাপতি এককভাবে সংস্থার নীতি, মূল্যবোধ বা কৌশলগত দিক নির্ধারণের অধিকার রাখেন না এবং তাঁর পদে থাকা ব্যক্তির জন্য যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন প্রদান সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিধির পরিপন্থী। সংস্থাটির মতে, একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন, তবে তা কেবল সংগঠনের কাঠামো নয়, বরং বিশ্ব ফুটবলের সার্বিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইনফান্তিনোর পূর্ববর্তী কিছু বক্তব্যও তদন্তের আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অক্টোবরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন যে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক শান্তি–উন্নয়নে অবদান রাখায় শীর্ষ পর্যায়ের স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। নভেম্বরে মায়ামিতে আমেরিকান বিজনেস ফোরামের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে এবং তাঁর প্রতি সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন। এসব বক্তব্য ফিফা সভাপতির অবস্থান নিয়ে অতিরিক্ত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এ ছাড়া জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর ইনফান্তিনো যে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, তাও অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত। ফেয়ারস্কোয়ারের অভিযোগ, ভিডিওটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করে, যা ফিফার নৈতিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংগঠনটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নিকোলাস ম্যাকগীহান মন্তব্য করেন যে বিষয়টি কেবল নির্দিষ্ট কোনো নেতাকে সমর্থন করার প্রশ্ন নয়; বরং ফিফার প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে সভাপতির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া আন্তর্জাতিক ফুটবলের স্বার্থকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর জন্য রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দীর্ঘদিন ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ফিফার বিধান অনুযায়ী, সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বর্তমান বা প্রার্থী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সমর্থনসূচক বক্তব্য দিতে পারবেন না এবং ফুটবলের আন্তর্জাতিক পরিসরকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। এসব বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফিফার নীতিশাস্ত্র কমিটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে, যার মধ্যে সতর্কবার্তা, স্থগিতাদেশ বা অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিতর্ক সম্পর্কে ফিফার পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তদন্তের আবেদনটি গ্রহণ করা হলে নীতিশাস্ত্র কমিটি প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে এবং প্রয়োজনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করবে। আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে এ ধরনের তদন্ত শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভাবমূর্তিকেই নয়, বরং সংগঠনের সার্বিক প্রশাসনিক স্বচ্ছতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর একটি হিসেবে ফিফার সিদ্ধান্ত ও আচরণ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নীতিমালার মানদণ্ড স্থাপনে ভূমিকা রাখে। ফলে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এই বিতর্ক ফুটবল প্রশাসনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


