ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণায় শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণায় শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

 

জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি দল। নিয়ম অনুসারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় কিংবা প্রয়োজন হলে পরবর্তী দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি সহযোগিতা চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।

নির্বাচন কমিশন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদাধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগে বেশকিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হয় এবং এর জন্য তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন আয়োজনের সার্বিক কাঠামো, সময়সূচি, ভোটগ্রহণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্রিফিং রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।

সাক্ষাতের আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও নির্বাচন কমিশন বৈঠক করেছে। সেখানে নির্বাচন পরিচালনা কাঠামো, সহায়ক কর্মসূচি এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠককে কমিশন নির্বাচন-পূর্ব সমন্বয় কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আইনগত দিক থেকে কিছু সংশোধনীও সম্পন্ন করেছে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যা আগামী নির্বাচন পরিচালনায় নতুন কিছু বিধান ও প্রক্রিয়া সংযুক্ত করেছে। আরপিও সংশোধনের ফলে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই, আচ্ছিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ, ভোটগ্রহণ পদ্ধতির পরিপালন এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণসংহিতা বাস্তবায়নে কিছু পরিবর্তন এসেছে। কমিশন মনে করছে, নতুন বিধানগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন আরও নির্দিষ্ট হবে। প্রতিটি এলাকায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রস্তুতি, ভোটকর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনা গঠনে তফসিল ঘোষণার পর গতি আসবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকে কমিশন এবার বিশেষ গুরুত্বের একটি বিষয় হিসেবে দেখছে। কমিশন মনে করে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে অপরিহার্য। এ কারণে তফসিল ঘোষণার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আচরণসংহিতা পরিপালন এবং সমাবেশ-শোভাযাত্রা পরিচালনায় নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হবে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, নমিনেশন গ্রহণ ও বাতিল প্রক্রিয়া, আপিল নিষ্পত্তি এবং ইলেকট্রনিক বা প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ—সবকিছুই তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এগিয়ে যাবে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনী সময়সূচির প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে; তবে সব সিদ্ধান্ত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের এই সাক্ষাৎ ও সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাই, মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি ও প্রচারণা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে তৎপরতা বাড়াবে। অন্যদিকে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও তথ্যপ্রবাহও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কমিশনের সাক্ষাৎ শেষ হলে নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করবে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভৌগোলিক বাস্তবতা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় আসন্ন নির্বাচনকে ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে উঠে এসেছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশন আইনগত বিধান কঠোরভাবে পরিপালনের ওপর জোর দিচ্ছে এবং প্রার্থীদের জন্য নিরপেক্ষ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করাকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ