সুদানে সামরিক পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত: ক্রুদের সবাই নিহত

সুদানে সামরিক পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত: ক্রুদের সবাই নিহত

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সুদানের পূর্বাঞ্চলে একটি সামরিক পরিবহন বিমান অবতরণের প্রয়াসে বিধ্বস্ত হয়ে ক্রুদের সকল সদস্য নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লোহিত সাগর উপকূলের ওসমান দিগনা বিমানঘাঁটিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুটি পৃথক সামরিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে অবতরণের সময় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইলিউশিন ইল-৭৬ মডেলের সামরিক পরিবহন বিমানটি ঘাঁটিতে অবতরণ শুরু করার পরপরই প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। বিমানটি মূলত ভারী সরঞ্জাম, মানবিক সামগ্রী এবং সামরিক কর্মী পরিবহনে সুদানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সামরিক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দ্রুত অবতরণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় বিমানটি রানওয়ের নিকটবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। আরেক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, বিমানে থাকা সব সদস্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তবে সেনাবাহিনী এখনো নিহত কর্মীদের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

সুদানে চলমান অস্থিতিশীলতার মধ্যে এই দুর্ঘটনা সামরিক ও বেসামরিক উভয় মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সহিংস সংঘাত চলছে। রাজধানী খার্তুম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ দেশছাড়া হয়েছে বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

ওসমান দিগনা বিমানঘাঁটি সুদানের পূর্বাঞ্চলের একটি কৌশলগত সামরিক স্থাপনা, যেখানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন এবং মানবিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের লজিস্টিক অপারেশন বাড়ানো হয়েছে। সংঘাত তীব্র হয়ে ওঠার পর পূর্বাঞ্চলের ঘাঁটিগুলোর ওপর চাপ আরও বেড়েছে, কারণ দেশটির পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের বহু বিমানঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে পূর্বাঞ্চলে সামরিক উড়োজাহাজের যাতায়াত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর সামরিক বাহিনী ঘাঁটির আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও তদন্তকাজ শুরু করেছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে বলে জানা গেছে। সাধারণত ইল-৭৬ বিমানগুলো বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর বহরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এগুলো দীর্ঘ দূরত্বে ভারী মালামাল পরিবহনে সক্ষম। তবে দীর্ঘসময় ব্যবহৃত হওয়ায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই তুলে আসছেন।

সুদানের চলমান সংঘাত সামরিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। বিমানঘাঁটিসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সংঘর্ষের কারণে সরঞ্জাম সরবরাহ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনবল ব্যবস্থাপনা জটিল হয়ে ওঠায় এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে যে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর বহুমুখী চাপ রয়েছে।

মানবিক সংকটের মধ্যেই এই দুর্ঘটনা দেশের সংকট পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বহু অঞ্চলে খাদ্য, ওষুধ এবং আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করছে যে জরুরি সহায়তা অব্যাহত না থাকলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। বিমান পরিবহনের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পাঠানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম হওয়ায় এই দুর্ঘটনা হঠাৎ করেই লজিস্টিক সক্ষমতায় একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুদানের সামরিক বাহিনী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিস্তারিত বিবৃতি দেয়নি। দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাত অব্যাহত থাকায় সামরিক কার্যক্রম, মানবিক সহায়তা বণ্টন এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর এ দুর্ঘটনার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ