ফ্লোরিডায় জরুরি অবতরণের চেষ্টাকালে হাইওয়েতে চলমান গাড়ির ওপর ছোট বিমান পতন

ফ্লোরিডায় জরুরি অবতরণের চেষ্টাকালে হাইওয়েতে চলমান গাড়ির ওপর ছোট বিমান পতন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি ব্যস্ত মহাসড়কে জরুরি অবতরণের চেষ্টার সময় একটি ছোট বিমান চলমান গাড়ির ওপর আছড়ে পড়েছে। সোমবার রাতের এই ঘটনায় গাড়ির চালক সামান্য আহত হন, তবে বিমানের পাইলট ও আরোহী অক্ষত থাকেন। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় পাইলট বাধ্য হয়ে মহাসড়ককে জরুরি অবতরণের স্থান হিসেবে বেছে নেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত অনুযায়ী, বিমানটিতে একজন পাইলট ও একজন যাত্রী ছিলেন। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর পাইলট নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানান যে বিমানটির ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিরাপদ অবতরণের উপযোগী জায়গা খুঁজে না পেয়ে তিনি ফ্লোরিডার একটি ব্যস্ত হাইওয়েতে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন। তবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি সড়কে চলমান একটি ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর সরাসরি গিয়ে পড়ে। এতে বিমান ও গাড়ি উভয়ই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধ্বংসাবশেষ মহাসড়কের বিস্তৃত অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ৫৭ বছর বয়সী এক নারী। বিমানের আঘাতে গাড়িটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনার পর জরুরি সেবাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই নারীকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তিনি সামান্য আঘাত পেলেও গুরুতর কোনো শারীরিক ক্ষতির শঙ্কা নেই। অন্যদিকে বিমানের পাইলট ও আরোহী শারীরিকভাবে অক্ষত আছেন এবং তাঁদের চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হয়নি।

দুর্ঘটনার পরপরই হাইওয়ে পুলিশ অঞ্চলটি ঘিরে ফেলে এবং মহাসড়কে যানচলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধ্বংসাবশেষ অপসারণের পাশাপাশি সড়কটির ক্ষতি পর্যালোচনা করতে পরিবহন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে। ঘটনার ফলে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে যানজট তৈরি হলেও পরে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক চলাচল পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়।

এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত ইঞ্জিন বিকল হওয়া, জ্বালানির ঘাটতি বা অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন। জরুরি পরিস্থিতিতে পাইলটদের লক্ষ্য থাকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করা। তবে ব্যস্ত সড়ক বা জনবহুল এলাকার ওপর বাধ্যতামূলক অবতরণের চেষ্টা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সীমিত হয়ে যায় এবং সড়কে চলমান যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে।

ফ্লোরিডা হাইওয়ে পেট্রোল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা জানায়, ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) তদন্ত শুরু করবে। এফএএ সাধারণত বিমানের যান্ত্রিক অবস্থা, ফ্লাইট রেকর্ড, পাইলটের অভিজ্ঞতা, আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং জরুরি বার্তাসহ বিস্তৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে। এই তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে, পাইলট কি যথাযথ ত্রুটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন এবং বিমানের যান্ত্রিক অবস্থায় কোনো অবহেলা ছিল কি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোট আকারের ব্যক্তিগত ও প্রশিক্ষণ বিমানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হওয়ায় বছরে বিভিন্ন সময়ে জরুরি অবতরণ বা যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনাটি সেই বাস্তবতাকেই আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতের বিমান নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তদন্ত সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে, যা অঙ্গরাজ্যের বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নীতিমালা উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতরভাবে আহত না হলেও ঘটনাটি মহাসড়ক ব্যবহারকারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ব্যস্ত সড়কের ওপর জরুরি অবতরণজনিত ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে ভবিষ্যৎ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নির্ধারণে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ