গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব হিসেবে দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব হিসেবে দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয় ডেস্ক

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আগামীর জাতীয় নির্বাচনকে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই নির্বাচন শুধু নিয়মিত প্রশাসনিক কাজের অংশ নয়; এটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেন।

ভিডিও কনফারেন্সে দেশের সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাস বাংলাদেশের জন্য নতুন এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা জাতির অগ্রযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, অতীতের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বহু নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আসন্ন নির্বাচনকে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের মোক্ষম সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইউএনওরা মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি এবং নির্বাচন পরিচালনায় তাদের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, প্রতিটি পোলিং স্টেশনের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করতে হবে, স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে হবে এবং সেসব সমস্যা সমাধানে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দায়িত্বশীল ও নিয়মমান প্রশাসনিক কার্যক্রমের মাধ্যমেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন গণভোটের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণ করবে, আর গণভোটের মাধ্যমে শত বছরের জন্য রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার মতে, গণভোট দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলবে। তিনি ইউএনওদের ভোটারদের মধ্যে গণভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশ দেন এবং বলেন, ভোটারদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তারা কোন অবস্থান নিয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে চলেছেন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজন একটি সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি ধাপকে দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি কর্মকর্তাদের দায়িত্বকে একটি ধাত্রীর ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করেন এবং বলেন, সঠিক তত্ত্বাবধানে যেমন স্বাস্থ্যকর শিশুর জন্ম নিশ্চিত হয়, তেমনি দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। তিনি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সৃজনশীলতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ভোটকেন্দ্রে নারীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নারীরা যেন কোনো বাধা ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে আসতে এবং ভোট প্রদান করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

তিনি জানান, শীঘ্রই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তাই নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ইউএনওদের কর্মপরিকল্পনা, দায়িত্ববণ্টন এবং মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি সুদৃঢ় করতে হবে। তিনি প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন, যাতে ভোটগ্রহণের দিনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে স্থান পায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ