আন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত

আন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত

জাতীয় ডেস্ক

আন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বুধবার বিকেল সाढ़ে ৩টায় সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি নিজ রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই ইঙ্গিত দেন।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে আসিফ মাহমুদের কাছে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, তিনি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে পদত্যাগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই জানানো হবে। কোন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ও অগ্রগতি তুলে ধরতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক সংস্কার এবং সেবাধারার মানোন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, মন্ত্রণালয় স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদার, নগর সেবার মান বাড়ানো এবং স্থানীয় সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে থেকেই রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন ছিল, উপদেষ্টা পরিষদের কমপক্ষে দুই সদস্য আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পদত্যাগ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে—এমন সময়েই এ গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পূর্বে বা পরে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় দুই উপদেষ্টা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেন।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আসিফ মাহমুদ বলেন, পদত্যাগ সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এখতিয়ারভুক্ত। তিনি নিজে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার অবস্থানে নেই। তার বক্তব্যে ধারণা পাওয়া যায় যে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি থাকলেও প্রশাসনিক প্রটোকল মেনে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছেন।

অন্যদিকে, আন্তর্বর্তী সরকারের অপর ছাত্র প্রতিনিধি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি বা তার মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। ফলে তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

আন্তর্বর্তী সরকারের গঠনকাঠামোর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ ও তরুণ প্রতিনিধিদের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয় তরুণ সমাজের মতামত নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত করার উদ্দেশ্যে। ফলে এই দুই ছাত্র উপদেষ্টার সম্ভাব্য পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত সরকার পরিচালনা, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং তরুণ নেতৃত্বের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা—সবকিছুর ওপরই প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে, তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্যতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই, জোট ও সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ে পরিবর্তন আসলে তা শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত নীতি-অবস্থানেও নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

আসন্ন নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন মহল ইতিবাচক মন্তব্য করে আসছে। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী দুই উপদেষ্টার যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপ নেয়, তবে তা তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক আগ্রহ, নেতৃত্ব বিকাশ এবং প্রার্থী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে—তা নির্ভর করছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর, নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি এবং সংশ্লিষ্ট দুজন উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ওপর। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ