সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প, বিয়ানীবাজারে উৎপত্তি কেন্দ্র

সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প, বিয়ানীবাজারে উৎপত্তি কেন্দ্র

 

জাতীয় ডেস্ক

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) গভীর রাত ২টা ৫০ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে সিলেট অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৩.৫ মাত্রার একটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকায়, যা ঢাকা থেকে প্রায় ২১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ভূমিকম্পের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ছিল অক্ষাংশ ২৪.৮৩° উত্তর এবং দ্রাঘিমা ৯১.৮৩° পূর্ব। কেন্দ্রীয়ভাবে মৃদু মাত্রার হলেও সিলেট মহানগর ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় মানুষ তা অনুভব করেন। ভূমিকম্পটি স্বল্পস্থায়ী ছিল এবং এর কারণে কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিলেট অঞ্চলে ছোট ছোট ভূমিকম্প একাধিকবার অনুভূত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষত রাতের গভীর সময়ে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় অনেকেই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে ধারাবাহিক মৃদু কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ইঙ্গিত না দিলেও ভূতাত্ত্বিক চাপের পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিলেট অঞ্চল পাহাড়ি এলাকা এবং সক্রিয় ফল্ট লাইনের নিকটে হওয়ায় এ অঞ্চলে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ঘন ঘন হওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। ঐতিহাসিকভাবে সিলেটসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভূকম্পন ঘটেছে। ভূতাত্ত্বিক কাঠামোগত কারণে এখানে শক্তি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, যা সময় সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে মুক্ত হয়।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও আগাম সতর্কতার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি জোরদার করা জরুরি। তারা জানান যে সঠিক ভূমিকম্প-সহনশীল নির্মাণব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। বিশেষ করে নগরায়ণের হার দ্রুত বাড়ার কারণে ভবন নির্মাণে মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সিলেট অঞ্চলে বহু পুরোনো ভবন, সরু সড়ক এবং উচ্চ জনঘনত্বের এলাকাগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে তুলনামূলক বেশি। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এসব এলাকায় জরুরি সেবা পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে, যা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসন, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন।

প্রতিটি ভূমিকম্পের পর আবহাওয়া অধিদপ্তর বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এর সম্ভাব্য প্রভাব ও ভূতাত্ত্বিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতির কারণ না হলেও ধারাবাহিক কম্পন ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইনের গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে।

সিলেট অঞ্চলের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো স্থানীয় জনগণকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মিয়ানমার এবং তিব্বতের ভূতাত্ত্বিক প্লেটগুলোর সংযোগস্থলের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের সন্নিকটে অবস্থিত। ফলে দেশের উত্তর ও পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ভূকম্পন তুলনামূলক বেশি অনুভূত হয়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় সঠিক আচরণ জানা থাকলে প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। তারা বাড়ির ভেতর নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া, ভারী বস্তু থেকে দূরে থাকা, বৈদ্যুতিক সংযোগ সচেতনভাবে ব্যবহার এবং ভবন থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো স্মরণপূর্বক অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সবশেষ ভূমিকম্পটি স্বল্পমাত্রার হওয়ায় বড় কোনো প্রভাব না পড়লেও ধারাবাহিক ভূকম্পন সিলেটবাসীকে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করার কথা জানানো হয়েছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ