ইউক্রেনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান ট্রাম্পের

ইউক্রেনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান ট্রাম্পের

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশটিতে চলমান যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার ফলে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।

রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে জরুরি অবস্থা জারি হয়। দেশটির আইনে যুদ্ধকালীন অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা যায় না। ফলে ২০২৪ সালের মার্চে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা বাড়ে। ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন যে, যুদ্ধ পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইউক্রেনের অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। তাঁর দাবি অনুযায়ী, যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচন দীর্ঘ সময় স্থগিত রাখলে জনগণের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক বৈধতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জেলেনস্কি ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। এ বিষয়ে সংসদের ক্ষমতাসীন দলকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা, ভোটারদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

অন্যদিকে রাশিয়াও জেলেনস্কির বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনেক আগেই মত দিয়েছেন। রাশিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্থবির করা হলে তা সমাধান প্রক্রিয়া আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই মন্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে, কারণ নির্বাচন হলে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হতে পারে।

এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের আরও একটি বসতি দখল করেছে। তবে কিয়েভ জানিয়েছে, লিমান, স্লোভিয়ানস্কসহ কয়েকটি স্থানে রুশ বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে। দোনেৎস্কের পোকরভস্ক শহরেও তীব্র লড়াই চলছে। শহরের কিছু অংশ এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের বলে স্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। যুদ্ধ পরিস্থিতির এই অনিশ্চয়তা নির্বাচনের বাস্তবায়ন আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংঘাতের পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও তৎপরতা বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেন সংকট সমাধানে নতুন করে সমন্বিত আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানিয়েছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ইউরোপ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে এসব আলোচনা যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজন হলে দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে যুদ্ধের মধ্যেই নির্বাচন করার ফলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মিললে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো নিরাপত্তা, লজিস্টিক সহায়তা এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখলে পরিস্থিতি আংশিকভাবে হলেও স্বাভাবিক করা সম্ভব হতে পারে। ইউক্রেনের রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে যুদ্ধের মাঝেও জনগণের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেনে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ আলোচনার সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন কঠিন হলেও রাজনৈতিক বৈধতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা উন্নত হয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতটা পাওয়া যায়—তার ওপরই নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ও বাস্তবায়ন নির্ভর করবে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ