আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জাপানের উত্তরপূর্বাঞ্চলে চার দিনের ব্যবধানে আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে সংঘটিত এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭। ভূমিকম্পের পর উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর, যা সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় সাধারণ মানুষের আগাম নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল হনশু অঞ্চলের আওমোরি উপকূলবর্তী সাগরের তলদেশের প্রায় ২০ কিলোমিটার গভীরে। আকস্মিক ভূকম্পন হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বাসিন্দারা কয়েক সেকেন্ড ধরে তীব্র দুলুনি অনুভব করেন। ভূমিকম্প কেন্দ্রের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং নৌযানগুলোকে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি এড়াতে গভীর সাগরের দিকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
মাত্র চার দিন আগে, একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ছিল সাগরের তলদেশে এবং তা উপকূলীয় এলাকায় উল্লেখযোগ্য আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। নতুন ভূমিকম্পটি বিশেষজ্ঞদের মতে পূর্ববর্তী কম্পনের ধারাবাহিকতার অংশ হতে পারে। ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় এমন ধারাবাহিক কম্পন নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হনশু, হোক্কাইডো এবং টোকিওর পূর্বদিকে অবস্থিত চিবা অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের প্রতি বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পশ্রেণি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অঞ্চলটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকতে এবং জরুরি সহায়তা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের ভূমিকম্পে কোনো প্রাণহানি, আহত কিংবা উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষ জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বোঝা সম্ভব নয়, তাই মাঠপর্যায়ের জরিপ এবং মূল্যায়নের কাজ চলছে। রেল যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বন্দর কার্যক্রমে সাময়িকভাবে সতর্কতামূলক সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, যাতে যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি। দেশটি প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার নামে পরিচিত ভূতাত্ত্বিক সক্রিয় অঞ্চলের ওপর অবस्थित হওয়ায় প্রায়ই উল্লেখযোগ্য মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। শক্তিশালী ভূমিকম্পের ইতিহাস বিবেচনায় জাপান দীর্ঘদিন ধরে উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা ও দুর্যোগ মোকাবিলা কৌশল গ্রহণ করে আসছে। এসব ব্যবস্থা দ্রুত সতর্কতা প্রচার, প্রয়োজনে আশ্রয় নির্দেশনা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফলে, সাম্প্রতিক কম্পনগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নতুন করে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, একই অঞ্চলে ধারাবাহিক ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ ভূতাত্ত্বিক প্লেটের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, যা ভবিষ্যতে আরও বড় কম্পনের ইঙ্গিত দিতে পারে। পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রেখে আবহাওয়া দপ্তর এবং ভূমিকম্প গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে জাপানের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা সক্রিয় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ অবস্থায় উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে এবং সতর্ক সংকেত পাওয়া মাত্র নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সুনামি ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এবং উদ্ধারকারী দলগুলোকে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জাপানে পরপর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প পরিস্থিতির জটিলতা বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ ও গবেষকরা অঞ্চলটির ভূ-কম্পন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি শান্ত ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।


