ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাল বিএনপি

ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-৮ সংসদীয় আসনের প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এ ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশটি আয়োজন করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির আগে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলার খবর পেয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হন এবং এটিকে রাজনৈতিক সহিংসতার একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা অবাধ ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, গুলিবর্ষণের ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, আহত প্রার্থীর চিকিৎসা চলাকালে হাসপাতালে পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করা হয়, যা চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারত। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংযম বজায় রেখেছেন, যাতে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা নির্বিঘ্নে চলতে পারে।

সমাবেশে বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা নতুন নয় এবং অতীতেও বিভিন্ন সময়ে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। তাঁর মতে, রাষ্ট্র ও নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থির করার যেকোনো উদ্যোগ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, কোনো রাজনৈতিক সহিংসতায় কারও প্রাণহানি বা আহত হওয়া কাম্য নয় এবং এমন ঘটনা প্রতিরোধে সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে তা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক হওয়াই গণতন্ত্রের মূল শর্ত।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ওসমান হাদি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁকে একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেখা হয় এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সুস্থ হয়ে তিনি আবারও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন। একই সঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান, যেন হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, শেখ রবিউল আলম, হাবিবুর রশিদ হাবিব, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল কবির পলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করেন, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সহনশীলতা ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি বলে তারা উল্লেখ করেন।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নয়াপল্টন এলাকা থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর ও ফকিরাপুল মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা হামলার ঘটনার বিচার এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাটি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ