পানি বণ্টন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সমঝোতা, জানুয়ারিতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা

পানি বণ্টন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সমঝোতা, জানুয়ারিতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো দীর্ঘদিনের পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। শুক্রবার এই চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা দুই দেশের কৃষি ও সীমান্ত অঞ্চলের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়ার পর এই অগ্রগতি ঘটে।

মার্কিন কৃষি বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে মার্কিন কৃষক ও পশুপালকদের জন্য নির্ধারিত পানির বর্তমান বাধ্যবাধকতা পূরণ করা সম্ভব হবে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই চুক্তিতে চলমান পানিচক্রের পাশাপাশি পূর্ববর্তী পানিচক্র থেকে সৃষ্ট ঘাটতিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সমঝোতার আওতায় আগামী সপ্তাহ থেকে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রায় দুই লাখ দুই হাজার একর-ফুট পানি ছাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই দেশ জানুয়ারির শেষের দিকে একটি বিস্তারিত ও চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুমোদনের লক্ষ্যে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই এই পানি ছাড় কার্যকর হবে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পানির সংকট কিছুটা লাঘব হয়।

এই ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, মেক্সিকোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আট লাখ একর-ফুট পানি পাওনা রয়েছে। তিনি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পানির অন্তত এক-চতুর্থাংশ ছাড়ের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পানি সরবরাহ না হলে মেক্সিকোর ওপর নতুন করে পাঁচ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। প্রেসিডেন্টের এই অবস্থান আলোচনায় গতি আনে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

রিপাবলিকান দলের নেতারা মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ১৯৪৪ সালের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র কলোরাডো নদীর নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি মেক্সিকোকে সরবরাহ করে এবং এর বিনিময়ে রিও গ্র্যান্ড নদী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্য পানি পায়। রিও গ্র্যান্ড নদী যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই পানিবণ্টন চুক্তি দুই দেশের কৃষি, শিল্প ও জনজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন, দীর্ঘস্থায়ী খরা এবং পানির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে কৃষি উৎপাদন ও পশুপালন কার্যক্রম পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে নির্ধারিত পরিমাণ পানি সময়মতো না পাওয়া গেলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলেও প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সমঝোতা স্বল্পমেয়াদে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন হবে। দুই দেশকে ভবিষ্যতে পানির দক্ষ ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং যৌথ অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হতে পারে। জানুয়ারিতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুমোদিত হলে তা দুই দেশের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্ত অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ