পালমিরায় আইএসআইএসের অতর্কিত হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও এক দোভাষী নিহত

পালমিরায় আইএসআইএসের অতর্কিত হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও এক দোভাষী নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সিরিয়ার ঐতিহাসিক শহর পালমিরায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএসের এক সদস্যের অতর্কিত হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এই হামলার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টম) এক বিবৃতিতে হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, হামলায় আরও কয়েকজন সেনা আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমের তথ্য অনুযায়ী, পালমিরা এলাকায় নিয়মিত যৌথ টহলের অংশ হিসেবে মার্কিন ও সিরীয় বাহিনীর একটি গাড়িবহর চলাচল করছিল। এ সময় আইএসআইএসের এক সদস্য হঠাৎ করে হামলা চালায়। হামলাকারী একাই এই আক্রমণ চালিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে সেন্টম। হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে ওই জঙ্গি নিহত হয়।

মার্কিন দূত টম ব্যারাক জানান, হামলাটি মূলত ‘মার্কিন ও সিরীয় সেনাদের যৌথ টহল গাড়িকে’ লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, এই ধরনের হামলা প্রমাণ করে যে আইএসআইএস এখনো বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সক্রিয় রয়েছে এবং সুযোগ পেলে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে আঘাত হানতে সক্ষম।

হামলাকারী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক বিবৃতিতে বলেন, হামলায় জড়িত ব্যক্তি সহযোগী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। তিনি নিহত সেনাদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নিহত সেনাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রচলিত নীতির অংশ।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা জানান, যে এলাকায় হামলাটি ঘটেছে, সেটি সিরিয়ার বর্তমান নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল সারারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো অস্থির এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ রয়েছে। এই বাস্তবতায় আইএসআইএসের মতো সংগঠন বিচ্ছিন্ন হামলার সুযোগ খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

পালমিরা সিরিয়ার একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। একসময় আইএসআইএস এই শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। যদিও পরবর্তীতে সিরীয় বাহিনী ও তাদের মিত্রদের অভিযানে শহরটি পুনরুদ্ধার করা হয়, তবুও আশপাশের মরু এলাকায় আইএসআইএসের ঘাঁটি ও সেলগুলো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির মূল উদ্দেশ্য আইএসআইএসের পুনরুত্থান ঠেকানো এবং স্থানীয় মিত্র বাহিনীগুলোকে সহায়তা করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএসআইএসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দুর্বল হলেও তাদের বিচ্ছিন্ন সদস্য ও ছোট সেলগুলো এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পালমিরার এই হামলা সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘটনায় সিরিয়ায় চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা শূন্যতা সৃষ্টি হলে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তা কাজে লাগাতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। মার্কিন ও মিত্র বাহিনীর জন্য এটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দিতে পারে।

হামলার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সামরিক সূত্র। একই সঙ্গে আইএসআইএসের সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক শনাক্ত ও ভেঙে দিতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ