অর্থনীতি ডেস্ক
চলতি ডিসেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৃষ্ট ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার কিনেছে। বৈদেশিক মুদ্রার যোগান ও চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে এ ডলার ক্রয় সম্পন্ন হয়। এতে প্রতি ডলারের বিনিময়হার নির্ধারিত হয় ১২২ টাকা ২৯ পয়সা এবং ১২২ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ এই ক্রয়ের ফলে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ডলার ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০৪ মিলিয়ন বা ২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি মাসের ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর সময়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১২৯ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়িয়েছে এবং আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের চাপ কমিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক চিত্রেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা স্পষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ১ হাজার ২২৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমাতে এবং আমদানি পরিশোধ ব্যবস্থায় স্বস্তি আনতে সহায়ক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কাঠামোগত ও নীতিগত উদ্যোগ কাজ করছে। হুন্ডি প্রতিরোধে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে, প্রবাসী আয়ের ওপর বিদ্যমান প্রণোদনা অব্যাহত রয়েছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে। এর ফলে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বেশি অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন, যা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়িয়েছে।
ডলারের উদ্বৃত্ত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারে হস্তক্ষেপের অংশ হিসেবে এমপিএ পদ্ধতিতে ডলার কেনা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে একাধিক দরে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনাবেচা হয়, যা বাজারভিত্তিক বিনিময়হার নির্ধারণে সহায়ক বলে মনে করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের ক্রয়ের উদ্দেশ্য হলো অতিরিক্ত ডলার শোষণ করে বিনিময়হার অস্বাভাবিক ওঠানামা রোধ করা এবং মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ইতিবাচক প্রভাব বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও পড়ছে। যদিও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দায় বিবেচনায় নেওয়া হয়, তবু নিয়মিত রেমিট্যান্স প্রবাহ বৈদেশিক লেনদেনে দেশের সক্ষমতা জোরদার করে। এতে জ্বালানি, খাদ্যশস্য ও শিল্পের কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় আমদানির অর্থায়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার চাপ কমে।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময়হার অনুযায়ী দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। মাসভিত্তিক এই অঙ্কও সাম্প্রতিক সময়ের রেমিট্যান্স প্রবাহের শক্ত অবস্থানকে নির্দেশ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবাসী আয় সাধারণত বাড়ে, যা চলতি ডিসেম্বরে ডলার বাজারের পরিস্থিতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে।


