জেলা প্রতিনিধি
ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া বাজার এলাকায় গণসংযোগকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভেলুমিয়া বাজার এলাকায় একটি রাজনৈতিক গণসংযোগ কর্মসূচি চলাকালে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষ চলাকালে বাজার এলাকার কয়েকটি স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
জামায়াতে ইসলামী নেতাদের অভিযোগ অনুযায়ী, বিএনপির একটি মিছিল বাজার এলাকায় প্রবেশ করার পর তাদের কর্মীদের লক্ষ্য করে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তারা দাবি করেন, সংঘর্ষের সময় জামায়াত-সমর্থিত তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তথ্য সংগ্রহ ও ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে পাঁচজন সাংবাদিক বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত দুইজন হলেন মো. আবুল বাসার এবং আশিক ইলাহি। তারা দুজনেই জামায়াতের কর্মী বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. কামাল হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে মিছিল নিয়ে এসে জামায়াতের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং বাজার এলাকায় তাদের সমর্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অন্যদিকে, ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউনুস খান কমান্ডার জামায়াতের পক্ষ থেকে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের হামলা বা ভাঙচুরে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, পরিস্থিতির জন্য জামায়াতের কর্মীদের উসকানিকেই দায়ী করা যায় বলে তারা মনে করেন।
ঘটনার পরপরই ভেলুমিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা এলাকায় টহল জোরদার করেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংস পরিস্থিতি এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সংযম ও সমন্বয় প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
এ ঘটনার ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাজার এলাকার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দ্রুত স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।


