দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর বিদেশে অবস্থানের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। একই সঙ্গে দেশে ফিরে তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।

বিএনপি সূত্র অনুযায়ী, তারেক রহমান লন্ডনে দীর্ঘদিন অবস্থানের পর নির্ধারিত দিনে ঢাকায় পৌঁছাবেন। দেশে ফিরেই তিনি অসুস্থ মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখতে যাবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে দলীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বিভাগীয় পর্যায়ে জনসভা ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সরাসরি অংশ নেবেন।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলীয় সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজধানীর গুলশান ও নয়াপল্টনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়গুলোতে তার জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তার বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়িটি পূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল। দলীয় সূত্র জানায়, বাড়িটির অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ভবনের সামনে নিরাপত্তা ছাউনি স্থাপন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য পৃথক একটি চেম্বার প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে আধুনিক অফিস সুবিধা, ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় আসবাব সংযোজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য সংলগ্ন কক্ষগুলো সংস্কার করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, এই কার্যালয় থেকেই নীতিনির্ধারণী আলোচনা ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তারেক রহমান।

এ ছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় তারেক রহমানের জন্য আরেকটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কার্যালয়টি মূলত তৃণমূল নেতাকর্মী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের জন্য ব্যবহৃত হবে। সেখানে অপেক্ষাকক্ষসহ বৈঠকের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে একটি ভবন বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ভবনটিতে নির্বাচনী কৌশল, গবেষণা কার্যক্রম এবং বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত কাজ পরিচালিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানে ব্রিফিং রুম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জন্য আলাদা কক্ষ চালু করা হয়েছে।

তারেক রহমান এর আগে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে একাধিক দলীয় অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিতে চান। দেশে ফিরে গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে অভ্যর্থনা কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তাকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ উপলক্ষে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এই কর্মসূচি ঘিরে সাংগঠনিক সভা ও প্রস্তুতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি উপস্থিতি দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় করবে এবং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়াবে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামো ও নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। একই সঙ্গে এটি দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ