আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য ও সিকিমকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি বা মন্তব্য দেশটি মেনে নেবে না এবং এ বিষয়ে দিল্লি নীরব থাকবে না।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) আসামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে ধারাবাহিকভাবে হুমকিমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান একটি বাস্তবতাবিবর্জিত ও অগ্রহণযোগ্য চিন্তাধারা। তিনি দাবি করেন, গত প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে কিছু মহল থেকে এ ধরনের মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য উদ্বেগজনক। তাঁর মতে, এসব বক্তব্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক আস্থার পরিপন্থী।
ভারতের অবস্থান তুলে ধরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ভারত একটি বৃহৎ রাষ্ট্র, পারমাণবিক শক্তিধর এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ভারতের সক্ষমতা ও অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তিকর ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। এ ধরনের ভুল ধারণা দুই দেশের সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন, ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক মনোভাব অব্যাহত থাকলে তার প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) এক নেতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিতে পারে। একই বক্তব্যে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং অর্থ ও অস্ত্র সহায়তার অভিযোগও তোলেন।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি বলেন, অঞ্চলটি স্থলবেষ্টিত এবং সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই মন্তব্যের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোর, যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত, তা নিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা ও উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার আগে বাংলাদেশের উচিত নিজেদের ভূগোল ও নিরাপত্তা বাস্তবতা বিবেচনা করা। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত কিছু সংবেদনশীল করিডোর রয়েছে, যেগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি এলাকা। অন্যটি হলো দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি করিডোর।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। সীমান্ত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা রয়েছে। ফলে উভয় দেশের দায়িত্বশীল মহলের সংযত বক্তব্য ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।


