আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যক্তি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে চিহ্নিত, তাদের দেখামাত্র গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মামলার অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে শরিফ ওসমান হাদির সমর্থকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। প্রশ্নে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে এবং তাদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়া হলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

একজন সমর্থক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযুক্তদের নামে নির্দিষ্ট মামলা না থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য ও প্রমাণ থাকলে মামলার বিষয়টি বিবেচ্য নয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত বলে চিহ্নিত হন, তাহলে তাকে দেখামাত্র গ্রেপ্তার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্বে মামলা আছে কি না, তা পুলিশের জন্য অজুহাত হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কড়া ভাষায় সতর্কবার্তা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ধরনের গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, যদি নির্দেশনা অনুসারে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ বক্তব্যের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়সম্পন্ন কিছু ব্যক্তির নাম উঠে আসায় আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনা রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে আইন প্রয়োগের বার্তা দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হলো অপরাধ দমন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় বা দলীয় সংশ্লিষ্টতা বিবেচ্য নয়—এ বিষয়টি পুনরায় গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জসহ শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিল্প এলাকায় কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, তা পর্যবেক্ষণ করবে সংশ্লিষ্ট মহল। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহ, গ্রেপ্তার ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে পরিচালিত হয়, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক নির্দেশনাকে সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ