নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফেরার লক্ষ্যে ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে এই আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, আবেদনটি ইতোমধ্যে হাইকমিশনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফেরার জন্য তারেক রহমানকে ট্রাভেল পাস নিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি একাধিক বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং তার পূর্ববর্তী বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী দেশে প্রবেশের জন্য একবারের ভ্রমণ অনুমতিপত্র হিসেবে ট্রাভেল পাস গ্রহণই একমাত্র উপায়।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তারেক রহমানের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ থাকলেও তিনি সে সময় আবেদন করেননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেশে ফিরতে চাইলে ট্রাভেল পাস ইস্যুই প্রযোজ্য হবে। এ ধরনের ট্রাভেল পাস সাধারণত এককালীন ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয় এবং তা দিয়ে দেশে প্রবেশের পর নিয়মিত পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকে।
এ বিষয়ে গত মাসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের জন্য কোনো আইনি বা প্রশাসনিক বাধা নেই। তিনি বলেছিলেন, যেসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট নেই বা মেয়াদোত্তীর্ণ, সেসব ক্ষেত্রে সরকার এককালীন ট্রাভেল পাস ইস্যু করে থাকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পন্ন হলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ট্রাভেল পাস ইস্যুর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিকত্ব, পরিচয় এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য যাচাই করা হয়। যাচাই শেষে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নিয়ম ও বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত বিধিমালা অনুসারে সম্পন্ন হয়।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৭ বছর পর তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরতে যাচ্ছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি ২৫ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নির্ধারিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। ওই দিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আগমন উপলক্ষে দলীয়ভাবে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় এবং সম্ভাব্য যাতায়াতপথে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত মন্তব্য করেনি।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত ২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে ভর্তি আছেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দেশে পৌঁছানোর পর তারেক রহমান সরাসরি মাকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারেন। এ কারণে বিমানবন্দর ও হাসপাতালকেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একজনের দেশে ফেরা দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই প্রত্যাবর্তনের রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নির্ভর করবে পরবর্তী কার্যক্রম ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর।
বর্তমানে ট্রাভেল পাস ইস্যু সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার দিকেই সবার দৃষ্টি রয়েছে। আবেদনটি অনুমোদিত হলে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী তারেক রহমানের দেশে ফেরা কার্যকর হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আশা প্রকাশ করেছে।


