ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে টানা অবস্থান ও বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে টানা অবস্থান ও বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ছাত্র-জনতা। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালেও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে তারা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর শুক্রবার ভোরে শাহবাগ মোড়েই মাইকে আজান দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেন আন্দোলনকারীরা। নামাজ শেষে তারা পুনরায় বিক্ষোভে অংশ নেন এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, শরিফ ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডকে তারা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে শাহবাগ মোড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ অবস্থান নেয়। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীদের স্লোগানের মাধ্যমে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই শাহবাগে অবস্থান নেয় জুলাই মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ। একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরেও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাঙ্গন ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তারা বলেন, অতীতেও বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের বিকল্প নেই।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ, জড়িতদের পরিচয় এবং হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। তবে দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় শাহবাগে এ ধরনের টানা অবস্থান কর্মসূচি নগরজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তারা মনে করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি উপস্থাপন এবং দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণই হতে পারে উত্তরণের পথ।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে প্রশাসন, এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী শীর্ষ সংবাদ