বিনোদন ডেস্ক
বিশ্বখ্যাত নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ গত ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে। প্রথম দুই কিস্তির ব্যাপক বাণিজ্যিক সাফল্য ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ধারাবাহিকতায় এই পর্বটি নিয়ে দর্শক ও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উঁচু। মুক্তির পর সিনেমাটি দর্শকপ্রতিক্রিয়া ও সমালোচনায় একযোগে প্রশংসা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে, যা চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ প্যান্ডোরার জগৎকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এবারের পর্বে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন এক নাভি গোষ্ঠীর সঙ্গে, যাদের নাম ‘মাংকওয়ান’ বা আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মানুষ। আগের কিস্তিতে যেখানে পানির নিচে বসবাসকারী মেটকায়িনা গোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছিল, সেখানে নতুন ছবিতে আগ্নেয়ভূমি ও আগুননির্ভর পরিবেশকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়েছে। এর মাধ্যমে প্যান্ডোরার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও নাভি সমাজের ভিন্ন ভিন্ন জীবনধারাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
চলচ্চিত্রটির গল্পে এবার কেবল মানুষ ও নাভিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নয়, বরং নাভি সমাজের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও মতপার্থক্যও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের মাধ্যমে ক্ষমতা, সম্পদ ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নকে সামনে আনা হয়েছে। নির্মাতার পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলোকে নাভি সভ্যতার বিবর্তন ও জটিলতার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আগের দুই কিস্তির তুলনায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
তবে মুক্তির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও দর্শক আলোচনায় সিনেমাটির কাহিনি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দর্শকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গল্পের কাঠামো আগের কিস্তিগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। এই শ্রেণির দর্শকদের মতে, কাহিনির অগ্রগতির তুলনায় দৃশ্যনির্ভর উপস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে চরিত্রের আবেগ ও সম্পর্কের গভীরতা প্রত্যাশিত মাত্রায় বিকশিত হয়নি বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, সিনেমাটির কারিগরি দিক নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা রয়েছে। উন্নত ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, ত্রিমাত্রিক দৃশ্যায়ন, রঙের ব্যবহার এবং প্যান্ডোরার পরিবেশ নির্মাণে প্রযুক্তির ব্যবহারকে এবারও শিল্পমানের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করছেন, ভিজ্যুয়াল স্পেশাল ইফেক্টের দিক থেকে ছবিটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে। তবে প্রায় ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ব্যাপ্তি অনেক দর্শকের জন্য দীর্ঘ মনে হয়েছে, যা দেখার অভিজ্ঞতায় প্রভাব ফেলেছে।
বাণিজ্যিক দিক থেকেও ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ গুরুত্বপূর্ণ নজর কাড়ছে। প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির শুরুতে উল্লেখযোগ্য আয় করেছে। যদিও প্রাথমিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় কিস্তির তুলনায় এর উদ্বোধনী আয়ের গতি কিছুটা ধীর। তবুও আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদর্শনের মাধ্যমে এটি কী পরিমাণ আয় করতে পারবে, সে বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মহলে বিশ্লেষণ চলছে।
প্রথম ‘অ্যাভাটার’ ও এর পরবর্তী কিস্তি বক্স অফিসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে যে মানদণ্ড স্থাপন করেছিল, তৃতীয় পর্বটি সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কি না, তা সময়ই নির্ধারণ করবে। দর্শকপ্রতিক্রিয়া, মুখে-মুখে প্রচার এবং আন্তর্জাতিক বাজারের পারফরম্যান্সের ওপর এটির চূড়ান্ত বাণিজ্যিক অবস্থান নির্ভর করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব মিলিয়ে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ একদিকে প্রযুক্তিনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের অগ্রগতিকে সামনে এনেছে, অন্যদিকে গল্প ও আবেগগত উপস্থাপনা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্যান্ডোরার জগৎকে আরও বিস্তৃত করার এই প্রয়াস ভবিষ্যৎ কিস্তিগুলোর জন্য কী ধরনের দিকনির্দেশনা তৈরি করবে, তা নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।

