খেলাধুলা ডেস্ক
সন্ত্রাসী হামলায় আহত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শনিবার তার স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। এই বিপুল জনসমাগম ও হাদির প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনেও প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় দল ও সাবেক ক্রিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির মৃত্যু এবং জানাজা উপলক্ষে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
শরিফ ওসমান হাদি সম্প্রতি এক সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের আবহ তৈরি হয়। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। একই দিনে রাজধানীতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।
জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় মানুষের উপস্থিতি ও বিদায়ের ধরন তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি হাদির জীবনের লক্ষ্য ও সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন। হৃদয়ের এই মন্তব্যে হাদির প্রতি তরুণ প্রজন্মের শ্রদ্ধা ও আবেগের প্রতিফলন দেখা যায়।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটও জানাজায় মানুষের উপস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, তার জীবনে আগে কখনো কোনো জানাজায় এত মানুষের সমাগম দেখেননি। এই উপস্থিতিকে তিনি হাদির প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মন্তব্যে হাদির সামাজিক প্রভাব এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সংযোগের বিষয়টি উঠে আসে।
জাতীয় দলের পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় হাদির ব্যক্তিগত পরিচয়ের দিকটি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, হাদি কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন না, বরং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মানুষের আস্থা ও সম্মান অর্জন করেছিলেন। এবাদতের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সমাজে ব্যক্তির নৈতিক অবস্থান ও কর্মকাণ্ড কীভাবে সম্মানের ভিত্তি গড়ে তোলে।
আরেক পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি তার প্রতিক্রিয়ায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে আনেন। তিনি শরিফ ওসমান হাদির জন্মস্থান ও প্রতিবাদী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করেন। রাব্বির বক্তব্যে হাদির সংগ্রামী মানসিকতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তার স্পষ্ট অবস্থানের কথা উঠে আসে। তিনি এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের স্মরণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখেন।
ডানহাতি পেসার রুবেল হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় হাদির জানাজায় মানুষের উপস্থিতিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকা অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এমন জনসমাগম দেখা যায় না। তার বক্তব্যে রাজনীতির উদ্দেশ্য ও জনসম্পৃক্ততার প্রশ্নটি সামনে আসে, যা হাদির জীবনের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
ক্রিকেটারদের এই প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে বোঝা যায়, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু কেবল রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এর প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একজন নাগরিক হিসেবে তার কর্মকাণ্ড, আদর্শ এবং জনসম্পৃক্ততা তাকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছিল। এই ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যতে সামাজিক আন্দোলন, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং নাগরিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


